তানিন আফরিন,গাইবান্ধা থেকে:
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে শাক-সব্জি উৎপাদনে প্রাতিষ্ঠানিক পুষ্টিবাগান তৈরিতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাগণ।
দেশী-বিদেশী ৬০ ধরনের এবং ২০০টি জাতের মধ্যে দেশে এখন ৯০ শতাংশ বীজের সব্জি উৎপাদন হচ্ছে। পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় শাক-সব্জির ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক ২২০ গ্রাম সব্জি খাওয়া প্রয়োজন। যা বাংলাদেশে মাত্র ৭০ শতাংশ মানুষ পূরণ করতে পারেন। বর্তমানে কৃষি ক্ষেত্রে কৌশলগত ও আধুনিক প্রযুক্তিতে সব ধরনের সব্জি উৎপাদন করা হচ্ছে।
শাক-সব্জিতে প্রচুর পরিমাণ খনিজ লবণ, আঁশ ও ভিটামিন রয়েছে। তাই,শরীরের পুষ্টি চাহিদাপূরণে শাক-সব্জির গুরুত্ব অপরিসীম। এসব পুষ্টি উৎপাদনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে ধারণা দিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে গোবিন্দগঞ্জের উপজেলা কৃষি বিভাগ। প্রাতিষ্ঠানিক সব্জি বপন ও পুষ্টিবাগানের সন্ধান মেলে সম্প্রতি উপজেলার নাকাই বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং গোবিন্দগঞ্জ সরকারি কলেজ প্রাঙ্গনসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। প্রাতিষ্ঠানিক স্থাপন কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধকরণে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কৃষি বিভাগের জিয়াউল হক রিন্টুসহ একাধিক কর্মকর্তাগণ। তারা শাক-সব্জি উৎপাদন ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিয়ে সবজি বাগান স্থাপন করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকার সারা দেশে অনাবাদী পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনাসহ পুকুর ও খালের পাড়, স্যাঁতসেঁতে ছায়াযুক্ত প্রতি ইঞ্চি অব্যবহৃত ও অনাবাদি জমিতে শাক-সবজি ও ফলমূল উৎপাদনের আহ্বান জানান। এতে মানুষের পুষ্টিহীনতা দূরকরণের পাশাপাশি খাদ্যনিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। এ লক্ষ্যে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন কার্যক্রম অব্যাহত রেখে নতুন করে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক পুষ্টিবাগান তৈরী।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে পরিকল্পনাটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি প্রস্তুত করে সেখানে বপণ করা হচ্ছে- লাল শাক, পালং শাক, ঢেঁড়স এবং লাউসহ নানা প্রকারের শাক- সব্জি। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় প্রাতিষ্ঠানিক পুষ্টিবাগান স্থাপন কর্মসূচি ইতোমধ্যে শিক্ষক- শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এছাড়াও বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকা পরিবারের মানুষের জন্য এই বাগান করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাগণ শাক-সবজি উৎপাদন ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ধারণা দেয়ায় অনেকটাই জ্ঞানের সঞ্চার হয়েছে আমাদের।
প্রধান শিক্ষক শেখ আশরাফুল ইসলাম আজাদ বলেন, কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় আমাদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গনের পাশে সবজি পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। এজন্যে কৃষি বিভাগ তথা সরকারকে সাধুবাদ জানাই। গোবিন্দগঞ্জের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিয়াউল হক রিন্টু বলেন, শিক্ষার্থীদের শাক-সব্জি উৎপাদন বা পুষ্টিগুণ বিষয়ক উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব্জি ও পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বীজ-সার এবং উপকরণসমূহ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদ বলেন, পরিবারে পুষ্টি চাহিদাপূরণের লক্ষ্যে পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগে মানুষের খাদ্য ঘাটতি পূরণ হয়েছে। পাশাপাশি স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধকরণ ও তাদের হাতে-কলমে শেখানোর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক পুষ্টিবাগান করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নের একটি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুষ্টিবাগান তৈরি করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।