পীরগঞ্জ বালিকা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী রদবদলসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ 222 0
পীরগঞ্জ বালিকা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী রদবদলসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ
মোস্তফা মিয়া,পীরগঞ্জ রংপুর থেকে:
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ১৯টি নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পীরগঞ্জ বালিকা দাখিল মাদ্রাসা একটি। উপজেলা সদরের পৌরসভার সোনাকান্দর মৌজায় অবস্থিত ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কর্মচারিদের বেনবেইজ পুরণে নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। মাদ্রাসাটিতে কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে উপস্থিতির দেখা মিলে না কখনও।
এছাড়াও ম্যানেজিং কমিটি গঠনের সময়ে অভিভাবকদের জানানো হয় না। গোপনে মনগড়া পকেট কমিটি গঠন করে প্রতিষ্ঠান চালানো হয়। ফলে নিজে সুপার বাবা হয়েছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। ভাই-ভাবী, শ্যালক মিলে ১৯ স্ট্যাফ প্যাটনের ৯ জন তাদের দখলে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে নানা অনিয়ম উঠে আসে। এছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত ভাবে কয়েকজনের অভিযোগ তদন্ত চলছে। এর মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারী রদবদলের অভিযোগ জোরালো হয়েছে। ২০০৪ সালে রংপুরের শিক্ষা ও উন্নয়ন এডিসি আব্দুস সালাম প্রতিষ্ঠানের সভাপতি থাকলেও বর্তমানে সুপার আব্দুল হাই সরকারের বাবা মাওলানা আফজাল হুসাইন সরকার সভাপতি হয়েছেন। এডিসি আব্দুস সালামের সময়ে নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সকল পদে পুর্ণতা আসে। এমপিও ভুক্তির পর পরই বাবা-ছেলের কারসাজিতে রদবদল শুরু হলে পদ বঞ্চিত অসহায় শিক্ষক-কর্মচারীরা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ইউএনও, জেলা প্রশাসক, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সচিবালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরি বাঁচাতে সহ-সুপার আব্দুল জলিল, শিক্ষক নুরুল ইসলাম, শাওন মিয়া, আহাদ আলী, হযরত আলী, শফিকুল ইসলাম ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মোস্তাফিজার, মাজেদ, মাসুদা অভিযোগ দাখিল করেন।
ইতোমধ্য শিক্ষক শাওন মিয়া ও নুরুল ইসলাম মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। যাহার রিট পিটিশন নং ৯২২২/২২ এইেক্স কোর্ট বিল্ডিং নং-১৭।
এছাড়াও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মাজেদ, মোস্তাফিজার ও মাসুদার পক্ষে হাইকোর্টে রিট ফাইলে প্রাথমিক ধাপে ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ স্বাক্ষরিত লিগেল নোটিশ সভাপতি ও সুপার বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে গত রোববার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, জেডেসি ও দাখিল পরিক্ষা দিতে বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ৪/৫ হাজারে ভাড়া করে রেজিষ্ট্রেশন করা হয়। এর পর পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জেডেসি ও দাখিলে শতভাগ ফলাফল মেলে। এরা অধিকাংশ এসএসসি অথবা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ বা আরও বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন কিংবা মাদরাসার শিক্ষার্থী। যে কারনে ওই বিদ্যালয়ের ফলাফল শতভাগ পাশ। ২০২২ সালেও দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহনে ২৫ জনকে ভাড়া করা হয়েছে।
সভাপতি ও সুপারের গ্রামের বাড়ি আরাজী গংগারামপুরের বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম মন্নু, পপ্পু, রাজা মিয়া জানান, প্রতিনিয়ত সকালে এদের বাড়িতে লোক-জনের মেলা বসে। প্রতিষ্ঠানের সুপার আব্দুল হাই সরকার জানান, বিধিভাবে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে, আইনী লড়াই আইনি ভাবে মোকাবেলা করা হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতির যোগসাজসে শিক্ষক-কর্মচারীর বিল ধরতে মোটা অংকের টাকা অথবা অপরাগতায় চাকুরিচ্যুত হুমকি প্রদানের অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সহ-সুপার ও রায়পুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল জানান,এ যাবত বাপ-ছেলে মিলে অর্ধ কোটির টাকার উপরে বাণিজ্য করেছে। আমার কাছেও ৬ লাখ টাকা চাওয়া হয়। দীর্ঘ দেড় যুগ কষ্ট করার পর এই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি আমি। প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারি ও সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম সফু সুপার আব্দুল হাইয়ের ব্যক্তিগত একাউন্টে ৪ লাখ টাকা জমা দিয়ে নিকো করেন।
এভাবে শিক্ষক-কর্মচারী প্রতি ৮ থেকে ৩ লাখ টাকা দিতে সম্মতির চুক্তিতে চাকুরী বহাল,অন্যথায় চাকুরিচ্যুত। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মমিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এমপিওভুক্তকরণ মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। লিখিতভাবে বালিকা মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীর অনেকের নিকট থেকে অভিযোগ পেয়েছি,এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর কাগজপত্র জমা নেয়া শুরু হয়নি। কাগজপত্র জমাদান প্রক্রিয়ার সময় অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে। ইউএনও বিরোদা রানী রায় জানান, পীরগঞ্জ বালিকা দাখিল মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারি অভিযোগ দিয়েছেন। আবার অনেকে অভিযোগ প্রত্যাহারে আবেদন করেছেন। ইতিমধ্যে অভিযোগসমুহ তদন্তে টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে।