কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগসহ নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগ
তিানিন আফরিন,গাইবান্ধা থেকে :
গাইবান্ধা জেলাধীন ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি মাহবিদ্যালয়ের এক ডজন সহকারী অধ্যাপক ও প্রদর্শকের বিরুদ্ধে অবৈধনিয়োগ জাল সনদ কাম্য ছাত্র ছাত্রী না থাকা সত্তেও বিধি বর্হিভূতভাবে বেতন উত্তলনের অভিযোগ দায়ের করেছেন মোঃ আব্দুর রহিম, আশিকুর রহমান, আতিকুর রহমান, রাজা মিয়া, মাহালম, ও মেহেদী হাসান।
গাইবান্ধা ব্যুরো প্রধান ০১/০৯/২০২৪ ইং তারিখ অভিযোগের সুত্র ধরে মাঠে নামেন দেশ বাংলা প্রতিদিনে ব্যুরো টিম। অভিযোগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ে দীর্ঘদিনধরে অনিয়ম ও দূর্নীতি চরম অবস্থা বিরাজ করছে। এই মর্মে গত ০৮/০৪/২০২১ ইং গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের হয় যা এখনো আদালতে বিদ্যমান রয়েছে। চলতি বছরের ১৮/০৭/২০২৪ ইং তারিখে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক বরাবর ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিকওত অভিযোগ দায়ের করেন অভিযোগকারীরা।
অভিযোগে বলা হয় অত্র কলেজের আইসিটি বিভাগের প্রভাষক জনাব তৌহিদা বেগম গত ২০০২ সালে আইসিটি সার্টিফিকেট জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন এবং বাইশ বছর ধরে সোনালী ব্যাংক ফুলছড়ির শাখার হিসাব নং ৩৪০৫২০৯২ থেকে অবৈধভাবে বেতন উত্তলন কে আসছেন যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এমপিও নিতীমালা ১৮.১. বিধি বর্হভূত। আইসিটি বিভাগের প্রভাষক তৌহিদা বেগমের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ছয় মাসের নট্রমস এর আইসিটি সার্টিফিকেট উল্লেখ থাকলেও তিনি একটি জাল সার্টিফিকেট প্রদান করে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তার স্বামী মোঃ মাহবুব হোসেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফওসার হওয়ায় শিক্ষা অফিস রংপুর অঞ্চল খাতিরে তার সহকারী অধ্যাপকের ফাইলটি পাস করে দেন যা বিধি বর্হভূত। অত্র কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিভগের প্রভাষক কামরুল লায়লা ১১/০২/২০১২ ইং তারিখে এনটিআরসিএ জাল সনদ দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।তার এনটিআরসিএর জাল সনদ এর সিরিয়াল নং ৯২৫৪৯৯, রেজি নংঃ ৩৪৬২৫৮/ ২০০৯ ও রোল নং ৪০৭১০২০৫ এই সনদটির মাধ্যমে গত ২০১৮ সালের জুন মাস তেকে ইনডেক্স নং(৩০৯৭৫৩৯) এ অবৈধভাবে বেতন উত্তলন করে আসছেন যা জালিয়াতির শামিল এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮.১.ঙ বিধিবহির্ভূত
অত্র কলেজের সাচিবিক বিদ্যা বিভাগের প্রভাষক সাহানাজ বেগম শম্পা গত ১০/১১/২০০৩ তারখে গভর্নিং বডির ৪৭ তম সভায় অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হোন। উক্ত নিয়োগ রেজুলেশনে তৎকালীন সভাপতি বেগম রওচন এরশাদ ( সাবেক এমপি) সাক্ষর নাই। গভর্নিং বডির ৪৬ তম সভায় তৎকালীন নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত শামীম মাহবুব ২৮ ই সেপ্টেম্বর ২০০৩ থেকে ১৭ই নভেম্বর ২০০৩ পর্যন্ত নায়েম এ ট্রেনিং এ থাকার আগে ২৬/১০/২০০৩ তারিখে গভর্নিং বডির রেজুলেশনে তৎকালীন শিক্ষক প্রতিনিধি ও ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক শাহিনূর আলমকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন। রেজুলেশনে উল্লেখ করেন অধ্যক্ষ ট্রেনিং শেষে এসে দায়িত্ব গ্রহন করলে তার এক দিন পর নিয়োগকার্য সম্পাদন করবেন। কিন্তু গোপনে তরিঘরি করে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ সম্পাদন করেন। নিয়োগ পরিক্ষার নিয়োম অনুযায়ী তিন জন পরিক্ষার্থী অংশ গ্রহন করার কথা থাকলেও উপস্থিত ছিলেন দুই জন। রেজুলেশন ও সি এস কপির ফলাফল শীটে দুই জনার উপস্থিতি রয়েছে। তার নিয়োহ পরিক্ষায় কোন এক্সপার্ট ছিলোনা, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজেই এই পরিক্ষা নেন যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮. ১ বিধি বর্হিভূত। শাহানাজ বেগম শম্পা সাচিবিক বিদ্যা শিক্ষক হয়েও এখন উৎপাদন ও বিপনন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে বেতন উত্তলন করেন। অথচ এ বিষয়ে কলেজে সমন্বয়ের কোন রেজুলেশন নাই। অত্র কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক ইসরাত জাহান চৌধুরী ১৫/০৬/২০০৪ ইং তারিখে প্রভাষক পদে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তাহার ইন্ডেস্ক নং এন ৩১০০৫৮৫, সোনালী ব্যাংক ফুলছড়ি শাখার একাউন্ট নং ৩৪৩০২৪৭১ থেকে পাচ বছর ধের বেতন ভাতা উত্তলন করে আসছেন। নিয়োগ বিধিমালা মোতাবেক চাকরির নিয়োগ পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারী থাকতে হবে নূন্যতম তিন জন, কিন্তু ১৫/০৬/২০২৪ তারিখে নিয়োগ পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারী হিসেবে ইসরাত জাহান চৌধুরী শুধু একাই ছিলেন। তার নিয়োগের সুপারিশ রেজুলেশন ডিজির নিকট গ্রহনযোগ্য না হওয়ায় পরবর্তীতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে রেজুলেশনের দ্বীতিয় পাতা ও বইয়ের এগারো নল পাতা পরিবর্তন করে এক জনার স্থলে ভূয়া তিন জন প্রার্থী দেখিয়ে সভাপতির সাক্ষর জাল করে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক জহুরুল ইসলাম ডিজিতে প্রেরণ করে এমপিওভূক্ত হন যা বিধি বর্হভূত ও সম্পুর্ন জালিয়াতি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮.৪ বিধি মোতাবেক কলেজে কোন বিজ্ঞান শাখা খোলা ও চলমান থাকার জন্য যে কোন ভিভাগে নূন্যতম ছাত্র ছাত্রী থাকা ২৫ জন, অথচ অত্র কলেজে ২০২১-২২ ও
২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ এই দুই বছর ছাড়া প্রতিবছর ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮,৯,৪,১২ ও ১৬ জন করে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ১৬ জন। যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ১৬.৩ বিধি বর্হিভূত ভাবে বিভাগটি চালু রাখা হয়েছে। কোন বিভাগ টিকে থাকার জন্য নুন্যতম পাশের হার থাকতে হবে উল্লেখ্য যে অত্র কলেজের ২০২৩ সালের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করেছে মাত্র তিন (০৩)জন। প্রতিমাসে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা বেতন উত্তলন করে থাকে। বর্তমান অধ্যক্ষ সব কিছু জেনেও বিধি বর্হিভূত ভাবে এই বেতনে সাক্ষর করে আসছেন। যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ১৮.১.চ বিধি লংঘনের সামিল। বর্তমান অধ্যক্ষ এটি এম রাশেদুজ্জামান উল্লেখিত সব কিছু অবগত হওয়া সত্তেও কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করেন না। বিষয়টি আমলে নিয়ে এসে তদন্তপুর্বক বিভাগীয় ও ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণে মর্জি কামনা করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগকারীরা অভিযোগ দায়ের করেন।