আলমগীর কবীর:
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সবশেষ নির্বাচিত মেয়র ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি নগরীর উন্নয়নে যে মাস্টারপ্ল্যান করেছিলেন, নির্বাচিত হলে সেটিই এগিয়ে নিতে চান তার মা ও সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী জায়েদা খাতুন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মেয়র পদপ্রার্থী জায়েদা খাতুনের পক্ষে তার নির্বাচনী ইশতেহার পড়ছেন ছেলে জাহাঙ্গীর আলম।
মঙ্গলবার দুপুরে নিজ বাসভবনে ঘোষিত ইশতেহারে এ কথাই জানিয়েছেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী।
তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জায়েদার ইশতেহার পড়েন তার নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক সাময়িক বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম।
ইশতেহারে জায়েদা বলেন, “আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা ও তার প্রণীত মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রয়োজন অনুযায়ী এবং প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদী চলাচল উপযোগী রাস্তা নির্মাণ করব।
যানজট নিরসনের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাও উঠে আসে জায়েদার ইশতেহারে।
সেখানে বলা হয়, এ ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকা রাজেন্দ্রপুর থেকে শুরু করে টঙ্গী হয়ে আশুলিয়া, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, কাউলতিয়াকে সংযুক্ত করে আউটার রিং রোড নির্মাণ ও দ্রুত সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত সংযোগ ব্রিজ নির্মাণ করে যাতায়াতের একাধিক বিকল্প রাস্তা তৈরি, গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে পর্যাপ্ত ফ্লাইওভার, ইউলুপ, ফুটব্রিজ,জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ করা হবে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে।
পাশাপাশি অত্যাধুনিক যাত্রী ছাউনি নির্মাণ,বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা, নগরীতে চলাচলের জন্য অত্যাধুনিক চক্রাকার এসি বাস সার্ভিস চালু, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়কের নামকরণের পরিকল্পনার কথাও জানান জায়েদা।
টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকা এই প্রার্থী তার ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন, নির্বাচিত হলে সাধারণ মানুষের হোল্ডিং ট্যাক্স আগামী পাঁচ বছরের জন্য মওকুফ করা হবে। হোল্ডিং অনুযায়ী বিভিন্ন সেবা ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে ডিজিটাল হোল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বাস্তবায়ন করা হবে,স্মার্ট হোল্ডিং কার্ড দেওয়া হবে। এতে নাগরিকরা অনলাইনে ঘরে বসেই হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে পারবেন।
এ ছাড়া যেদিন আবেদন করা হবে সেদিনই ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করার ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুও করা যাবে।
নগরীর উন্নয়ন প্রসঙ্গে ইশতেহারে বলা হয়, সিটি করপোরেশনের সেবা সহজ করার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হবে। বিভিন্ন নাগরিক সেবা যেমন জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, চারিত্রিক সনদ, প্রত্যয়নপত্র ডিজিটালাইজড করা হবে। যেন নাগরিকরা ঘরে বসে অনলাইনেই এই সব সেবা পেতে পারেন।
জনগণের সঙ্গে মেয়রের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ সহজ করতে ‘কল টু মেয়র’ অ্যাপ চালুর কথাও জানান স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন।
ইশতেহারে বলা হয়, নির্বাচিত হলে শিল্প-কারখানার মালিকদের ট্যাক্সের হার এক শতাংশ করা হবে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক জমি অধিগ্রহণ করে ডাম্পিং গ্রাউন্ড স্থাপন করা হবে। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে গার্বেজ ডিস্পোজাল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে।
এ ছাড়া প্রতি ওয়ার্ডে সোলার এলইডি স্থাপন, রাস্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ওয়ার্ডভিত্তিক নাইট গার্ড নিয়োগ দেয়া হবে। মহানগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবার জন্য নগরীতে চারটি স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, ৫৭ টি ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশন কর্তৃক পরিচালিত মিনি কমিউনিটি ক্লিনিক-হসপিটাল স্থাপন করা হবে। ছোট খাটো রোগের চিকিৎসার জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক ফ্যামিলি চিকিৎসক ও হোমিও চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে।
ইশতেহারে সিটি করপোরেশন এলাকায় মডেল মসজিদ, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ও ইসলামিক পাঠাগার চালুর পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে আওতাভুক্ত সব মসজিদের ইমাম, খতিবদের মাসিক সম্মানি দেয়া, প্রতিটি ওয়ার্ডে কবরস্থান, নারীদের জন্য বিশেষায়িত মসজিদ নির্মাণ, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের আধুনিকায়ন করার কথাও জানানো হয়।
পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় উপাসনালয় সংস্কার ও প্রতিস্থাপনে যথাযথ উদ্যোগ নেবেন বলেও জানান জায়েদা।
জায়েদার ইশতেহারে উঠে এসেছে শিক্ষার উন্নয়নে নানা পরিকল্পনার কথা। নারীদের স্বাবলম্বী করতেও পদক্ষেপ নেবেন তিনি। প্রতিটি ওয়ার্ডে আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার, খেলার মাঠ, ইনডোর প্লে গ্রাউন্ড স্থাপন,
কনভেনশন সেন্টার, অডিটোরিয়াম,পার্কিংসহ সিটি কর্পোরেশন অত্যাধুনিক বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা হবে।
স্থানীয় শ্রমিকদের তথ্য নিয়ে ডিজিটাল ডাটাবেইজ তৈরি করার কথাও জানানো হয়। তাদের চিকিৎসায় সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের কথাও উঠে এসেছে ইশতেহারে।
সিটি করপোরেশনে কর্মরত সবার জবাবদিহিতার মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন তিনি।