ওষুধের দাম বাড়ানোয় দিশেহারা রোগীরা 150 0
ওষুধের দাম বাড়ানোয় দিশেহারা রোগীরা
ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অজুহাত,দফায় দফায় গ্যাস,ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক টানাপোড়ান চলমান । আর সেই সুযোগে বিদ্যুৎ,জ্বালানি তেল ও ডলারের দর বাড়ার কারণে ওষুধের বাজারেও প্রভাব পড়েছে।
দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো ওষুধের দাম বাড়িয়ে চলেছে। ফলে নির্ধারিত দরের চেয়ে বাজারে অনেক ওষুধ বেশি দামে কেনাবেচা চলছে। লাগামছাড়া ওষুধের দামে বিপাকে রোগীরা। ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষ ৬টি প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত ২৩৪টি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে আরো ১০টি কোম্পানি তাদের উৎপাদিত ওষুধের দাম বাড়াতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করেছে। কেউ কেউ ওষুধের দাম সমন্বয় না করলে উৎপাদন বন্ধের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে। ওষুধ খাত এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
ফলে দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। মূলত সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও বিধিমালা না থাকায় কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম ইচ্ছামতো বাড়িয়ে চলছে। ওসব প্রতিষ্ঠান ওষুধের গুণগত মান না বাড়িয়েই দাম বাড়াচ্ছে। অথচ চিকিৎসা ব্যয়ের বড় অংশই ওষুধের পেছনে খরচ হয়। ওষুধের দাম লাগামহীন হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে পারছেন না অনেক রোগী। পাশাপাশি বাজারে ছড়িয়ে পড়েছেনকল,ভেজাল আর নিম্নমানের ওষুধ।
সূত্র জানায়,দেশে অত্যাবশ্যকীয় তালিকায় ২১৯টি ওষুধ রয়েছে। তার মধ্যে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ১১৭ ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। আর ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে অন্যগুলোর দর নির্ধারিত হয়।
গত জুলাইয়ে অত্যাবশ্যকীয় ৫৩ ওষুধের দাম বাড়িয়েছিল সরকার। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত শীর্ষ ছয় কোম্পানির ওষুধের দাম সর্বোচ্চ বেড়েছে। সবার শীর্ষে রয়েছে অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠান বাড়িয়েছে ৫২টি ওষুধের দাম। তাদের ওষুধের দাম সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাস লিমিটেড ৪৭টি ওষুধের দাম বাড়িয়েছে।প্রতিষ্ঠানটির ওষুধের দাম সর্বোচ্চ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড বাড়িয়েছে ৪৬টি ওষুধের দাম। প্রতিষ্ঠানটির ওষুধ সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ৩৯টি ওষুধের দাম ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ৩৬টি ওষুধের দাম ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ১৪টি ওষুধের দাম ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ওষুধের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে চিকিৎসক উপঢৌকন এবং ফার্মেসিদের কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করা প্রয়োজন। আর ওষুধের বিজ্ঞাপন খরচ কমিয়ে বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে ওষুধ প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সব ওষুধের দর সরকার নির্ধারিত ফর্মুলার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তারপরও ওষুধের দাম বাড়বে এবং তা হবে নিয়ন্ত্রিত।
কিন্তু বর্তমানে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের চিকিৎসা খাত নিম্নবিত্ত মানুষের আওতার বাইরে চলে যাবে এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর তার সার্বিক প্রভাব পড়বে। এ প্রসঙ্গে ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন জানান, ওষুধ বিক্রি করে অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন মূল্যও উঠছে না। যে কারণে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে দাম বাড়ানোর আবেদন করা হয়। তারা সবকিছু দেখে দাম সমন্বয় করেছে। এ ছাড়া করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকটে এলসি জটিলতা,কাঁচামাল আনতে সমস্যা এবং দফায় দফায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে ওষুধ উৎপাদনে খরচ অনেক বেড়েছে।
পাশাপাশি মোড়ক,পরিবহন,বিপণন খরচ বাড়ার প্রভাবও ওষুধের বাজারে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইফসুফ জানান, দৈনিক কোনো না কোনো ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ওষুধের দাম বাড়ানোর আবেদন করছে। এদের অনেকেই দাম না বাড়ালে উৎপাদন বন্ধের হুমকি দিচ্ছে। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বাজার তদরকির জন্য এরইমধ্যে সারাদেশে চিঠি দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করলে ফার্মেসির নিবন্ধন বাতিল করা হবে।