রংপুরের পীরগঞ্জ পীরোত্তর বড় পীর সাহেব ওয়াকফ এস্টেটের ৬ একর, ৭০ শতাংশ জমি জবর দখলের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি উপজেলার বড় আলমপুর ইউনিয়নের পত্নীচড়া গ্রামে।
ভুক্তভোগী, এলাকাবাসী ও রংপুর ওয়াকফ পরিদর্শকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে সরকারী বিধি মোতাবেক আবেদনের প্রেক্ষিতে পত্নীচড়া গ্রামের মৃত আব্দুল গফুর মিয়ার পুত্র মোস্তাফিজুর রহমান রেজাকে মোতাওয়াল্লী সেক্রেটারি ও তার ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেয় 'বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়-ঢাকা'। অনুমতি সাপেক্ষে উক্ত পীরোত্তর বড় পীর সাহেব ওয়াকফ এস্টেট- রং, ইসি নং- ১৯২৫৭ এর জমি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে মোতাওয়াল্লী/ সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান রেজা দেখতে পান যে, ওই এস্টেটের ৬ একর ৭০ শতাংশ জমির অধিকাংশই স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি বিধি বহির্ভূতভাবে বলপূর্বক ভোগদখল করে আসছে।
প্রথমে মোতাওয়াল্লী/সেক্রেটারি অবৈধ ভাবে ভোগ দখলদারদের বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ওয়াকফ এস্টেটের জমি উদ্ধারে পর্যায়ক্রমে রংপুর আদালতে অর্ধ ডজন মামলা করেন। মামলার প্রেক্ষিতে ৫৯ শতাংশ জমি ছাড়া সমূদয় জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে মর্মে জানান- মোতাওয়াল্লী/সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান রেজা। তবে মামলাগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সময় ও প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে তাকে। তাছাড়া চলতি বছরের ১৬ আগস্ট বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয় ঢাকায় ২০২২-২৩ ইং সালের ওয়াকফ চাঁদা পরিশোধ করা হয়েছে।
এদিকে মামলা মোকদ্দমার কারণে পত্নীচড়া গ্রাম দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে বর্তমান মোতাওয়াল্লী/সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান রেজা অপরদিকে একই গ্রামের মৃত মোস্তাফিজুর রহমানের পুত্র রায়হান মিয়া।
প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে রায়হান মিয়া গত ৭ আগস্ট'২২ তারিখে 'বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়-ঢাকায় বর্তমান কমিটিকে অবৈধ দাবি করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি জমা দেন, উক্ত কমিটির মোতাওয়াল্লী/সেক্রেটারি নিজ নাম উল্লেখ করেন। শুধু তাই নয়,রায়হান মিয়া ও দলের লোকজন ওয়াকফ এস্টেটের জমিও দখলের পাঁয়তারা করেন।এরই প্রেক্ষিতে রংপুর ওয়াকফ পরিদর্শকের কার্যালয় এর ওয়াকফ হিসাব নিরীক্ষক গত ২৮ আগস্ট তারিখে স্বাক্ষরিত সরেজমিন সমন্বিত তদন্তের নোটিশ দু'পক্ষকে প্রেরণ করেন।
গত ০৫ সেপ্টেম্বর তদন্তের নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই রায়হান মিয়া নিরপেক্ষ তদন্তকে ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এলাকায় মাইকিং করে তার স্বপক্ষের লোকজনদের জমায়েত ঘটান।
ঐদিন দুপুরে মোতাওয়াল্লী/সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রেজা,তার পুত্র ফাহিম সরকার তদন্তস্থলে যাওয়া মাত্র রায়হান মিয়া ও তার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের এলোপাতাড়ি মারডাং শুরু করেন। এ সময় ফাহিমের সঙ্গে থাকা ওয়াকফ এস্টেটের কাগজপত্রের ব্যাগটি তারা ছিনিয়ে নেয়। এদিকে গুরুতর আহত অবস্থায় পিতা-পুত্রকে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায় স্থানীয়রা। এ ঘটনায় পীরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তদন্ত কর্মকর্তা বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের ওয়াকফ হিসাব নিরীক্ষক নুরুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান,তদন্তে গিয়ে দু'পক্ষের অভিযোগ শুনেছি। ওয়াকফ এস্টেটের জমির খোঁজ খবর নিয়েছি। চলতি মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসন কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে। আপনার উপস্থিতিতে প্রতিপক্ষের লোকজন বর্তমান মোতাওয়াল্লী ও তার পুত্রকে মারডাং করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক লোকের সমাগম থামানো ছিল মুশকিল। তাই আমরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছি।