সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সকাল ৯:৩২ সময়
ছবি- বিদ্যুত কুমার
কুষ্টিয়ার খোকসা-জানিপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিদ্যুত কুমারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন এক শিক্ষিকা।
গতকাল রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) অভিযোগের তদন্তের দ্বিতীয় দফার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওই শিক্ষিকার দাবি, অভিযোগটি প্রত্যাহারের জন্য তাকে চাপ দিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল।
জানা গেছে, খোকসা-জানিপুর সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার শিক্ষক বিদ্যুত কুমার দাসের বিরুদ্ধে একই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর গত ৩ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন ওই শিক্ষিকা।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়েরের দশ দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ৩ টায় তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজমূল হকের দপ্তরে অভিযোগকারী ওই শিক্ষিকার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ওই দিন তিনি প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে জবানবন্দি দেন। রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দ্বিতীয় দফায়ও তিনি শুনানিতে অংশ নেন। নিজের দায়ের করা অভিযোগের বিষয়ে তিনি অনড় ছিলেন।
অভিযোগকারী ওই শিক্ষিকা চলে যাওয়ার পর বেলা সাড়ে ৩ টায় শুরু হয় অভিযুক্ত শিক্ষক বিদ্যুত কুমার দাসের আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি। দুই দফায় তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন বলে তদন্তের সাথে জড়িত এক কর্মকর্তা স্বীকার করেন।
অভিযোগকারী শিক্ষিকা সাংবাদিকদের জানান, প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষক বিদ্যুত কুমার দাস তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে উত্যক্ত করে আসছে। প্রথম দিকে তিনি প্রধান শিক্ষক ও এক সহকারী শিক্ষকের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু অনেক দিনেও প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে বাধ্য হয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন।
ওই শিক্ষিকা আরও বলেন, অভিযোগ করার পর থেকে ওই শিক্ষক তার দুই সন্তানকে হুমকি দিয়ে আসছে। অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য দেওয়া হচ্ছে নানামুখী চাপ। তাকে ফেনীর মাদরাসাছাত্রী রাফির পরিণতির শিকার হতে হবে বলেও হুমকি দিচ্ছে ওই শিক্ষক। তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে শিক্ষক বিদ্যুত কুমার দাসের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি বলেন, অভিযোগের কথা তিনি শুনেছেন। ওই শিক্ষিকার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটিতে তাকে হাজির হওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে যুক্তি তুলে ধরেন। এ বিষয়ে তিনি এর বেশি আর বলতে রাজি হননি।
সদ্য জাতীয়করণ হওয়া খোকসা-জানিপুর সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আলী বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা প্রথমবারের মত তদন্তে বসেছেন। তবে সংবাদ না ছাপার জন্যও তিনি অনুরোধ করেন। সংবাদ প্রকাশের সময় হলে তারা নিজেরাই জানাবেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজমূল হক বলেন, বিষয়টি এখনও স্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে। সংবাদ না ছেপে তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেও তিনি অনুরোধ জানান।
প্রসঙ্গত, এর আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করে আলোচিত হয়েছিলেন এই শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে এর আগেও এমন অভিযোগ করেন এলাকাবাসী ।