অনলাইন জুয়া বন্ধ ধরা পড়লে ৫বছরের কারাদন্ড বা ১০ লাখ অর্থদন্ডের বিধান

:
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকলেই চোখে পড়ে গেম খেলে লাখ লাখ টাকা আয়ের প্রলোভন। দেশে অনলাইন জুয়া সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে। আর অনলাইন জুয়ার বিভিন্ন চক্রে জড়িয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনলাইন জুয়ার প্রকোপ থামাতে পারছে না। আইনে জেল-জরিমানা যৎসামান্য হওয়ায় জুয়াড়িরা গ্রেপ্তার হলেও সহজেই মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার দেড়শ বছর পুরোনো ‘দ্য গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট ১৮৬৭’ বাতিল করে হালনাগাদ তথ্যপ্রযুক্তির চিন্তা করে ‘জুয়া প্রতিরোধ অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারির উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন অধ্যাদেশে শাস্তির পরিমাণ কোনো ক্ষেত্রে দুই হাজার গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। অনলাইন অ্যাপ ও সাইটে পরিচালিত জুয়ার জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। পুরোনো আইনে অনলাইন জুয়ার প্রসঙ্গ ছিল না। আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জুয়ার নতুন অধ্যাদেশে ম্যাচ ফিক্সিং (পাতানো খেলা) ও স্পট ফিক্সিংয়ের অপরাধকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। লটারির মাধ্যমে জুয়াকেও সরকার অধ্যাদেশে প্রাধান্য দিয়েছে। তাছাড়া হাউজি খেলা ও বেটিং বা বাজি ধরার মাধ্যমে জুয়া খেলাও অধ্যাদেশে গুরুত্ব পেয়েছে। ওসব জুয়া নিয়ে বিদ্যমান আইনে স্পষ্টভাবে কিছু উল্লেখ নেই। অধ্যাদেশ কার্যকর হলে জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকার।
সূত্র জানায়, অনলাইনে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ জুয়া/বেটিংয়ের ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন চিহ্নিত করা,সেগুলোর কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হয় তা নির্ণয় এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে একটি উচ্চ আদালত তদন্ত কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সাইবার জুয়া কোম্পানিগুলো মোবাইল ব্যাংকিংসহ ব্যাংক, ফাইন্যান্সিয়াল হাউজ কিংবা পেমেন্ট গেটওয়ে, এমএফএস/পিএসও/পিএসপি ইত্যাদির সঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড। মাসের পর মাস নির্দিষ্ট কিছু পুলের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ইরেগুলার, একমুখী এবং অস্বাভাবিক ট্রাঞ্জেকশন হচ্ছে। একটা পুল অফ নম্বরে টাকা যাচ্ছে, সেটা নির্দিষ্ট নম্বরে গিয়ে ক্যাশ আউট হয়ে বাইরে পাচার হচ্ছে। দেশে দিন দিন অনলাইনে জুয়াড়ির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সারা দেশের প্রতিটি শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা অনলাইনে বাজিতে ঝুঁকছে বেশি। যদিও সরকার গত কয়েক বছরে ৩ হাজার ৫০০টিরও বেশি জুয়ার সাইট বন্ধ করেছে। সিআইডি, ডিবি ও র্যাবের হাতে ধরা পড়েছে জুয়ার সাইট পরিচালনাকারী শতাধিক ব্যক্তি। তবে প্রতিটি সাইট বন্ধ করার পরপর ওই চক্র ভিপিএন (ভয়েস ওভার প্রটোকল নেটওয়ার্ক) দিয়ে সাইটগুলো আবার সচল করে। বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার বাজার কত টাকার, তার সঠিক হিসাব নেই। তবে দেশের কত মানুষ অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত, তার একটি আনুমানিক হিসাব গত সরকারের সময় পাওয়া গিয়েছিল। ওই হিসাবে দেশের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত।
এদিকে অধ্যাদেশে প্রস্তাবিত জরিমানা ও কারাদণ্ড প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব জানান, নতুন আইনে শাস্তির পরিমাণ ঠিকই আছে। তবে এ শাস্তি কার্যকর করার ওপরই আইনের সফলতা নির্ভর করবে। অর্থাৎ আইনের প্রায়োগিক দিকটি গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। দেশে অনলাইনে জুয়া কিংবা অন্যান্য অপরাধ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। ওসব অপরাধ ও অনলাইন জুয়া মনিটরিংয়ের জন্য সরকারকে একটা বিশেষ সেল তৈরি করতে হবে। ওই সেল থেকে অপরাধ মনিটরিং করে সেগুলো সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে তদন্ত করাতে হবে। তাহলে অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সহজ হবে।