নিজস্ব প্রতিনিধি :
আওয়ামীলীগ সরকার আমলে হত্যা,গুমসহ হত্যা চেষ্টার নানা অভিযোগের মধ্যে দিয়ে গত ৫ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশি দেশ ভারতে পালায়নের সাথে সাথে,এমপি,মন্ত্রীসহ জেলা ও থানা পর্যায়ের এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিতে আছেন। ক্ষমতায় ঠিকে থাকার নিমিত্তে সারা বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর অমানবিক নির্যাতন চালায় দলটির নেতা কর্মীরা। সেই আন্দোলনে গুলি লাগার পরেও প্রাণে বেঁচে যায় গাজীপুরের ছাত্র সমন্বয়ক সুহান ইসলাম। দীর্ঘ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর এখন কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। সেই বিভৎস চিত্রের কথা এখনো ভূলেনি গুলিবিদ্ধ সুহান ইসলাম।
গাজীপুরের সাইনবোর্ড ও বোর্ডবাজারের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল সুহানের। সহপাঠীদের সাথে আন্দোলনে নামে সুহান।
এই হত্যা চেষ্টায় অংশীজন হিসেবে পরিচিত গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থের যোগানদাতা ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এর ব্যবসায়িক পার্টনার হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব বাংলার রাঁধুনি ও লবঙ্গ রেস্তোরাঁর মালিক।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর একাধিক মামলা থেকে কৌশলে নিজেকে সেভ সাইডে রেখেছিলেন এই হাবিব।
গত ২৪ ডিসেম্বর২০২৪ইং তারিখে বাদী হয়ে গাজীপুর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন সুহান ইসলামের পিতা মিজানুর রহমান। যার মামলা নং ৮০৬ ।
মামলার বাদী মিজানুর রহমান জানান, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রকাশ্য মদদদাতা।
গত ৩ আগস্ট ২০২৪ ইং রাত আনুমানিক১১.৩০ মিনিটে অপরিচিত কতিপয় লোকদের সঙ্গে মিটিং করতে দেখেছি তার মালিকানাধীন বোর্ডবাজারস্থ বাংলার রাঁধুনি রেস্তোরাঁয়।
তিনি আরও জানান,আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে গাজীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল তার নিকট আত্মীয় পরিচয়ে এবং আওয়ামিলীগ পরিবারের সদস্য হিসেবে নিজেকে জাহির করতেন।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তার মায়ের নিকট আত্মীয় বলেও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে পরিচয় দিতেন এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আগে ৪ মার্চে ২০২৪ ইং তারিখে হাবিবুর রহমান হাবিব তার মালিকানায় পরিচালিত লবঙ্গ নামক রেস্তোরাঁয় ভ্যাট ফাঁকি অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হওয়ায় আক্রমনাত্মক হয়ে আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়ে ভ্যাট কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ ও লাঞ্চিত করার অভিযোগ ওঠে হাবিবের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত ঘটনার বরাত দিয়ে একাধিক পত্র পত্রিকায় সংবাদ ছাপানো হয়েছিল।
এছাড়াও গত ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে বাংলার রাঁধুনি রেস্তোরাঁ ও তৃপ্তি হোটেলে বিস্ফোরণের ঘটনায় ১ জনের মৃত্যুসহ ১৭ জনগুরুতর আহতের ঘটনায় মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে পতিত আওয়ামী সরকারের প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্সুইরেন্স কোম্পানি থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেখিয়ে এক কোটি টাকার ক্ষতিপূরন নিয়েছেন হাবিব।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর২০১৯ইং তারিখ বিজয় টেলিভিশনে ক্রাইম সার্চ টিমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখলে সহজেই অনুমান করা যায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিবের সঙ্গে পতিত আওয়ামী সরকারের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সম্পর্ক কতটা নিবিড় ছিল।
সাংবাদিকরা হাবিবের বিরুদ্ধে নারী ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ কার্যকলাপের অভিযোগ আনার পরও গাছা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার এবং গাছা থানার পুলিশ সদস্যগন নিরুপায় হয়ে হাবিবের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের বাধা দিয়ে ঐদিন স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন।
এখানেই শেষ নয় !
আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর মামলা থেকে বাঁচার জন্য ইতিমধ্যেই বোল পাল্টাতে শুরু করেছে হাবিবুর রহমান। অথচ গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ছিল তার দহরম মহরম সম্পর্ক। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী যুবলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামেও দেখা যেত হাবিবকে। এদিকে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ছয়দানাস্থ বাসায় নিয়মিত যাতায়াতও করতেন।
সুযোগ সন্ধানী এই হাবিব বহুরুপী চরিত্রের অধিকারী বলে লোকমুখে শোনা যায়।
গাজীপুর সিএমএম আদালতে মামলার বাদী সুহান ইসলামের পিতা এই প্রতিবদককে জানান,গাজীপুর সিটিকর্পোরেশন ৩৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল,ঐ হাবিবের ব্যবসায়িক পার্টনার এবং মামুন মন্ডলের বাড়ী সাইনবোর্ড এলাকায় হওয়ায় সেখানকার এলাকার কতিপয় অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীরা হাবিবের নেতৃত্বে আমার ছেলের উপর হত্যা চেষ্টা হামলা চালায়।
এদিকে আদালতের এই মামলায় শেখ হাসিনা,ওবায়দুল কাদেরসহ গাজীপুরের ২নং আসনের এমপি জাহিদ আহসান রাসেল,এবং ১ং আসনের এমপি আকম মোজাম্মেল হক,মেহের আফরোজ চুমকি,জাহাঙ্গীর আলমসহ মোট ২১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সুহানের পিতা মিজানুর রহমান।
গুলিবিদ্ধ সুহান এর তথ্যমতে হত্যার উদ্দেশ্যে নেতৃত্ব দেওয়া হাবিবকে সে চেনেন। সুহান জানায় ১৮ জুলাই ২০২৪ইং মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের বিশাল বহর নিয়ে যখন উত্তরার দিকে যান। সেই দিন আমরা কয়েক বন্ধু মিলে রাঁধুনি রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার খেয়েছিলাম। খাবারের মান ভাল না হওয়ায় হাবিব সাহেব ও তার ম্যানেজারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। সেই দিন হাবিব বলেছিলেন,তোকে সময় মত বুঝিয়ে দিবো কত ধানে কত চাল। আমার হোটেলে আর কখনো আসবি না।