সুব্রত আদিত্য:
কবি,সাহিত্যিক,সাংবাদিক,সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব,মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী প্যারী মোহন আদিত্য বাঙালির গর্ব বাংলাদেশের এক সাত্ত্বিক মনীষী। ব্যক্তিত্বে ঋজু,সারল্যে হাস্যোজ্জ্বল,মননশীল,মানবিক,উচ্চতর দেশপ্রেমের উদাহরণ এই প্রতিভাত ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের ইতিহাসের এক সময় খণ্ডের প্রতিটি অধ্যায়ে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের সাক্ষী এই সাহিত্যিক ও সাংবাদিক সারাজীবন লড়াই করেছেন দেশের জন্য, জনগণের জন্য তথা মানবকল্যাণের জন্য। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সোচ্চার। ১৯৪৯ সালে যখন মাওলানা ভাসানী, জননেতা এ কে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় তখন তার পক্ষে কাজ করেছেন এই ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব।
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলন, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের প্রতিটি ধাপে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন অকুতোভয় সৈনিক প্যারীমোহন আদিত্য। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই দেশপ্রেমিক বাঙালি প্যারী মোহন আদিত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি অকাতরে জীবনদানকারী একজন বীর সৈনিক।
দেশ যখন পরাধীন,আগাছায় ভরে ছিল প্রিয় মাতৃভূমির সেই দুঃসময়ে তিনি মনন আর মুক্তির চেতনায় সঞ্চারিত করতেন,জাগরিত করতেন এই জনপদের ভুখা-নাঙ্গা আপামর জনগণকে। যখন যেখানে যেভাবে পারতেন সেভাবেই উজ্জীবিত করতেন হাজার বছরের পরাধীন বাঙালিকে। কখনো লেখন দিয়ে, কখনো মালামাল দিয়ে, কখনো-বা বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে, জনসংযোগ ঘটিয়ে দেশবাসীকে সংগঠিত করতেন। তার চেয়েও বেশি তিনি নৈতিক মূল্যবোধে, ধর্মীয় চেতনায় সৎসঙ্গের মাধ্যমে সততার বাণী প্রচার করতেন সারল্যে ভরা কান্তিমান বাঙালির মননে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নেতাজী সুভাষ বসু, শরৎচন্দ্র বসু, মওলানা আবুল কালাম আজাদ, সরব ভারতমাতা এবং তার সন্তানেরা আন্দোলনে সেই সময়কে ধারণ করে বড় হয়েছেন লড়াকু প্যারী মোহন আদিত্য। ক্ষুদিরাম বসু, মাস্টার দা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার যখন বাংলার ঘরে ঘরে বিপ্লবের লেলিহান শিখা প্রজ্জ্বলন করেছেন তখনকার সেই প্রতিবাদী ধারায় প্যারী মোহনের যাত্রা শুরু।
শিকল ভাঙ্গার গান লিখে এবং গেয়ে নজরুল যখন ব্রিটিশ বেনিয়াদের রোষানলে,সে সময়ে প্যারী মোহন আদিত্য বিপ্লবের আগুনে জ্বলেছেন দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য।
প্যারী মোহন আদিত্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বভাগে ১৯৩৪ সালের ৫ জুন টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার পাকুটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মুকুন্দ মোহন আদিত্য। মায়ের নাম মহামায়া আদিত্য। তিনি চার ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়।
প্রচন্ড মেধাবী ছাত্র হওয়ার পরও শুধুমাত্র দেশ-মাটি-মানুষ ও মানবতার অমোঘ টানে উচ্চ শিক্ষার পথে গমন না করে ১৯৪৩ সালে পরম প্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের মানব দর্শনে দীক্ষিত হন।
“মানুষ আপন টাকা পর, বেশি করে মানুষ ধর,
মানুষ যার স্বার্থ হয়‘ পাওয়া তার ব্যর্থ নয়।”
মানবধর্মের এমন কালজয়ী দর্শন সামনে নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের আদর্শ ধারণ করে তাঁর বিশ্বাসের বেদিমূলে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকুটিয়া সৎসঙ্গ আশ্রম। মানব সেবার ব্রত নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। ১৯৫০ সালে পাকুটিয়ায় সৎসঙ্গের প্রথম শ্রীমন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৮ সালে ভারতের দেওঘর থেকে শ্রীশ্রীঠাকুরের শ্রীশ্রীপাদুকা বয়ে নিয়ে আসেন। সেই পাদুকাকে কেন্দ্র করে নামকরণ করা হয় ‘পাদুক পাঠস্থান।
শ্রীশ্রীঠাকুর ২৭ জানুয়ারি ১৯৬৯ (বয়স ৮০) দেওঘর, দেওঘর জেলা, ঝাড়খন্ড রাজ্য, ভারতে পরলোক গমন করেন। প্যারী মোহন আদিত্য ২ ফেব্রুয়ারি শ্রীশ্রীঠাকুরের পারলৌকিক ক্রিয়া উপলক্ষে বিশ্ব সৎসঙ্গের কর্মী-সম্মেলনে যোগদান করে শ্রীশ্রীঠাকুরের চিতাভষ্ম পুণ্যলীলাভূমি হিমায়েতপুরে পদ্মায় বিসর্জন দেবার আবেদন করেন এবং সেই স্মৃতিচিহ্ন সঙ্গে নিয়ে এসে পাবনায় পদ্মা নদীতে বিসর্জন দেন। (আলোচনা প্রসঙ্গে)
প্রগতিশীল চিন্তাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, প্যারী মোহন আদিত্য শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের দিব্য মানবদর্শন আর জ্ঞান সাধনায় নিজেকে নিযুক্ত করেন। এবং তারই আশীর্বাদে পাকুটিয়া সৎসঙ্গ আশ্রমে কর্মসম্পাদনা শুরু করেন। এ ব্যবস্থা পনার জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রকাশনা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় নিয়োজিত হন। সৎসঙ্গ আশ্রমের নিজস্ব মুখপত্র ‘সৎসঙ্গ সংবাদ’ পত্রিকার কাজে লেগে পড়েন। অত্যন্ত দৃঢ়চেতা, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, ধর্মপরায়ণ এবং ব্যাপক জানাশোনা পান্ডিত্য গুণসম্পন্ন এই গুণীজন প্যারী মোহন আদিত্য ‘সৎসঙ্গ সংবাদ’ পত্রিকার লেখা তৈরি, সংগ্রহ, সংযোজন, বিয়োজন, সম্পাদনা, প্রাক রিডিং এবং মুদ্রণ কাজে সর্বদা ব্যস্ত থাকেন। তাঁর কর্মনিষ্ঠার গুণে ‘সৎসঙ্গ সংবাদ’ পত্রিকাটির প্রচার, প্রসার ও সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৩ সালের ২১ নভেম্বর সৎসঙ্গ দেওঘর থেকে বিশ্ব সৎসঙ্গের সম্পাদক শ্রীযুক্ত জে বি গোস্বামীর স্বাক্ষরিত পূর্ব পাকিস্তান পাকুটিয়া সৎসঙ্গ আশ্রম কমিটি গঠন করা হয়। ১২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে প্যারী মোহন আদিত্য অন্যতম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। সম্পাদক নিযুক্ত হন রাসবিহারী আদিত্য। পরবর্তীতে প্যারী মোহন আদিত্য সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন।
প্যারী মোহন আদিত্য কর্মজীবনে পাকুটিয়া সৎসঙ্গ বাংলাদেশের (পূর্ব পাকিস্তান) সহ-সম্পাদক, সৎসঙ্গের একমাত্র মুখপত্র ‘সৎসঙ্গ সংবাদ’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে নিজেকে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার প্রাণশক্তিরূপে গড়ে তোলেন। বিনয়ী, সংবেদনশীল এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে তিনি মানবীয় সংবাদ পরিবেশনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন।
প্রতিটি জনপদে ঘুরে বেড়িয়েছেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের মানবদর্শনের বাণী পৌঁছে দিতে। মানবতা যে বড় ধর্ম, সে কথা জনমনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিরলস শ্রম সাধনা আর মেধা খরচ করে দেশ-দেশান্তরে ছুটে বেড়িয়েছেন। তাইতো অন্তর্দৃষ্টিতে তিনি দেশকে যেমন দেখতে পারতেন, তেমনি দেশের হতভাগ্য পরাধীন মানুষের দুঃখ-গøানি, বুকফাটা কান্নার ভাষা বুঝতে পারতেন। সেই অনুভূতি বুকে নিয়ে দেশের চরম দুঃসময়ে একদিন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ঘুমন্ত পরাধীন জাতির মুক্তির মহামন্ত্রে দীক্ষিত হোন সশস্ত্র যুদ্ধদেহে। পাকুটিয়া সৎসঙ্গ আশ্রম সে যুদ্ধের চারণক্ষেত্র।
মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইল অঞ্চলে বাঘাসিদ্দিকীখ্যাত কাদের সিদ্দিকীর ১১নং সেক্টরের ১নং হেড কোয়ার্টার অধিনে বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা ও আশ্রয় প্রদানকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকুটিয়া সৎসঙ্গ আশ্রমে পাকিস্তানি বাহিনী বারবার আঘাত হানে। পাকিস্তানী হায়েনা বাহিনীর মর্টার সেলের আঘাতে আশ্রমের মঠ ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। বিধ্বস্ত হয়ে যায় পুরো আশ্রম। বারুদের গন্ধে এক বিভীষিকাময় অবস্থার সৃষ্টি হয় মানবতার পাদপীঠ,আরাধনার ধ্যানাগার এ আশ্রমে।
প্যারী মোহন আদিত্য মূল মন্দিরে ধ্যানমগ্ন থাকায় তাঁকে মূর্তি ভেবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গুলি করা থেকে বিরত থাকে। আর এভাবে সেদিন পরম ভাগ্যগুণে বেঁচে যান প্যারীমোহন আদিত্য।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত লাল-সবুজের এই মাতৃভূমিকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র করার জন্য যাঁরা আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের অন্যতম একজন প্যারী মোহন আদিত্য।
পাকুটিয়া আশ্রম সময় ৪ এপ্রিল ১৯৭১ প্রথম বিপর্যয়ে লন্ডভন্ড। মর্টারের আঘাতে ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয়বার হানাদার বাহিনীর কবলে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। ২১ মে ১৯৭১ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বেপরোয়াভাবে পাকুটিয়া সৎসঙ্গ আশ্রমের অদূরে পাকুটিয়া বাজার হতে প্যারী মোহন আদিত্যকে ধরে নিয়ে যায়। তাঁকে টর্চারসেলে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। এত অত্যাচার সহ্য করেও শুধুমাত্র নিজ বুদ্ধিমত্তায় এবং কৌশলে হানাদারদের টর্চারসেল থেকে নিজেকে মুক্ত করেন। তারপরও বারবার বর্বর হানাদার বাহিনীর টার্গেট সৎসঙ্গ আশ্রমকে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করা হয়। ৮ আগস্ট তৃতীয়বার পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আশ্রমে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা ও শুশ্রুষা ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাঁকে টেনে হিঁচড়ে বেয়নেট চার্জ করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই যে নির্মম হত্যাকান্ড এই যে পৈশাচিকতা এর সঠিক বর্ণনা করার ভাষা আমার জানা নেই। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবী প্যারী মোহন আদিত্য নিজের জীবন দান করে গেলেন দেশ-মাটি-মানুষের স্বাধীনতার জন্য। কাল-কালান্তরে এদেশ তা মনে রাখবে। সেইদিন তাঁর সঙ্গে শহিদ হন সৎসঙ্গের আরেকজন বিশিষ্ট কর্মি বামা চরণ পার্স্ব শর্ম্মা।
মনন ও সৃজনশীল ধারার শক্তিমান ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন প্যারী মোহন আদিত্য। নাট্যচর্চা, সংস্কৃতিচর্চা, সম্পাদনা, উপস্থাপনায় সবকিছুকে ছাপিয়ে ইতিহাসে জ্বলজ্বল করছেন ধ্রুবতারার মতো তিনি স্বমহিমায়। আপন আলোয় বিকশিত হয়েছিলেন তিনি জাতীয় তরুলতা হয়ে।
অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন প্যারী মোহন আদিত্য। তিনি যেমন আত্মপ্রত্যয়ী ছিলেন তেমনি ছিল তাঁর বাঙালির বুদ্ধিদীপ্ত গড়ন। চিন্তা-চেতনা ও কর্ম-উদ্যোগে তিনি ছিলেন অগ্রসর, পরিশীলিত ও সংবেদনশীল একজন অগ্রগণ্য যোদ্ধা এবং ধৈর্য, সহিষ্ণুুতা, অধ্যাবসয়, চর্চা, তপস্যা সবকিছুতেই। তাইতো ব্যক্তিগত জীবনে, পারিবারিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক জীবনেও তিনি ছিলেন গুরুগম্ভীর ও সফল।
সততায়,পরিস্থিতিবোধে,রুচিশীলতায়,হাস্যময়তায় প্রাণবন্ত অথচ গভীর মননে দৃঢ় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল ছিলেন প্যারী মোহন আদিত্য।
জাতীয় ব্যক্তিত্বদের সাথে ছিল তাঁর নিবিড় সম্পর্ক। তৎকালীন জাতীয় সংসদের স্পীকার আব্দুল হামিদ চৌধুরী, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য শামসুর রহমান খান শাজাহান, ভবেশ বোস, রাসেদ সিদ্দিকী, মির্জা আমজাদ হোসেন এবং কাদেরীয়া বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার আলহাজ খোরশেদ আলম তালুকদার বীরপ্রতীক, কবি ও সাহিত্যিকসহ সকল বুদ্ধিজীবী এবং রাজনীতিবিদের সঙ্গে ছিল তাঁর সু-সম্পর্ক।
প্যারী মোহন আদিত্য শিল্প-সাহিত্য-সাংবাদিকতায় যেমন ছিলেন সিদ্ধ তেমনি পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন খুবই যত্নবান এবং দায়িত্বশীল।
বাংলাভাষার চর্চায় তিনি খুবই যত্নবান ছিলেন কাজের মধ্যদিয়ে তিনি এর প্রায়োগিক ক্ষেত্রে বেশ ভূমিকা রাখেন। লেখালেখি এবং সম্পাদনায় তিনি ছিলেন সুদক্ষ। তাইতো ‘সৎসঙ্গ সংবাদ’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসাবে সুনাম অর্জন করেন। তৎকালীন পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদের স্পীকার আব্দুল হামিদ চৌধুরীর সাথে তিনি সখ্য গড়ে তোলেন। মিস্টার চৌধুরী সৎসঙ্গ আশ্রমের অতিথিশালা উদ্বোধন করতে আসেন। বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আশ্রম পরিদর্শনে আসেন শুধুমাত্র বড়ভাই রাসবিহারী আদিত্য ও অকুতোভয় সৈনিক প্যারীমোহন আদিত্যের জন্য।
সৎসঙ্গ আশ্রম পরিদর্শনে এসে শহীদ বুদ্ধিজীবী প্যারীমোহন আদিত্যের স্মৃতিস্তম্ভে এযাবৎ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন এবং এখনো করেন প্রতিথযশা বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদগণ।
জাতীয় পর্যায়ের ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে প্যারী মোহন আদিত্য’র এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বুদ্ধিজীবী মহলে তিনি পরিচিত ছিলেন বিনয়ী এবং প্রজ্ঞাবান একজন সংগ্রামী মানুষ হিসেবে।
টাঙ্গাইল জেলায় অন্যান্য শহিদের মধ্যে শহিদ বুদ্ধিজীবী প্যারী মোহন আদিত্যের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত রশীদ হায়দার সম্পাদিত ‘স্মৃতি ১৯৭১’এর পুনর্বিন্যাসকৃত চতুর্থ খন্ডে, তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তা-চেতনা, মুক্তিযুদ্ধ কালীন তাঁর ভূমিকা ও অপরিসীম বীরত্বের কথা আলোকপাত করেছেন; চল”িচত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত সচিত্র বাংলাদেশ এ, “দেশাত্মবোধ ও আধ্যাত্মিক চেতনায় শহিদ বুদ্ধিজীবী প্যারী মোহন আদিত্য”, সৎসঙ্গ সম্পাদক শ্রীরাসবিহারী আদিত্য সম্পাদিত শ্রীশ্রীঠাকুর অনুক‚ল চন্দ্র ও সৎসঙ্গ বাংলাদেশের ইতিহাস গ্রুপে’, কবি সমরেশ দেবনাথের গ্রুপে’, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক শফিউদ্দিন তালুকদারের একাত্তরের গণহত্যা-যমুনা পর্ব ও পশ্চিম তীর, জুলফিকার হায়দারের ঘাটাইলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং টাঙ্গাইলের রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধ গ্রুপে’ এবং ভারত থেকে প্রকাশিত পত্রিকাতে প্যারী মোহন আদিত্য শহিদ হওয়ার বিবরণ রয়েছে। প্যারীমোহন আদিত্যের স্মরণে পাকুটিয়া সৎসঙ্গ তপোবন বিদ্যালয়ের সামনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়েছে। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাকুটিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সৎসঙ্গ আশ্রম পর্যন্ত সড়কটি ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী প্যারী মোহন আদিত্য সড়ক’ নামকরণ করা হয়েছে।
লেখক: সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ সৎসঙ্গ