প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া ভূয়া সেনা কর্মকর্তাসহ ৩ জন প্রতারককে গ্রেফতার র্যাব-১
২৩ ফেব্রয়ারি ২০২২ ইং তারিখ আনুমানিক রাত ২৩০০ ঘটিকায় র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিএমপি, ঢাকার দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য ১) মোঃ সামসুুজ্জোহা @ জুয়েল (৪০),পিতা- মোঃ আজিজুল হক,জেলা- দিনাজপুর, ২) মোঃ শামীম হাসান তালুকদার (৩৮), পিতা- মৃত আতাউল করিম তালুকদার, জেলা-নাটোর ও ৩) মোঃ আলমগীর হোসেন (৪০), পিতা- মৃত আব্দুল গোফরান, জেলা- নাটোর’দেরকে গ্রেফতার করে। এসময় ধৃত আসামীদের নিকট হতে ০১ টি ভ‚য়া সেনাবাহিনীর পরিচয়পত্র, ০২ টি ভ‚য়া বিজিবি’র পরিচয়পত্র,৩ টি ভূয়া নিয়োগপত্র,১৬ পাতা ব্যাংক স্টেটমেন্ট,১ টি ব্যাংক চেক ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ০৬ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বিগত কয়েক বছর যাবৎ ধৃত আসামী সামসুুজ্জোহা @ জুয়েল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাকুরী প্রত্যাশী ও তাদের পরিবারের সাথে সুকৌশলে পরিচিত হয় এবং উক্ত পরিচয়ের সূত্র ধরে ধৃত আসামী তার পরিচিত কয়েকজন উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার মাধ্যমে সেনাবাহিনী/বিজিবিতে চাকুরী দিতে পারবে মর্মে জানায়। ভিকটিমদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে সেনাবাহিনী/বিজিবিতে বেসামরিক বিভিন্ন পদে চাকুরী দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কৌশলে বিশ্বাস অর্জন করে এবং একপর্যায়ে সেনাবাহিনী/বিজিবিতে বেসামরিক পদে চাকুরীর জন্য ধৃত আসামী ভিকটিমদের ৫/৭ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে জানায়। ভিকটিম ও ভিকটিমের পরিবার তার কথায় সরল বিশ্বাসে ৫/৭ লক্ষ টাকা দিতে রাজি হয়। অতঃপর ভিকটিমদেরকে তাদের গ্রামের বাড়ি হতে মেডিকেল চেকআপ করার কথা বলে ধৃত আসামী সেনাকর্মকর্তার পিএ পরিচয় প্রদানকারী প্রতারক মোঃ আলমগীর হোসেন এর মাধ্যমে ধৃত অপর আসামী উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা (লেঃ কর্নেল) পরিচয়দানকারী প্রতারক মোঃ শামীম হাসান তালুকদারের সাথে সাক্ষাৎ করানোর জন্য ঢাকা সেনানিবাস সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ধৃত আসামীরা ভিকটিমকে একটি ভূয়া নিয়োগপত্র প্রদান করে,যাতে সেনাবাহিনী/বিজিবি’র মনোগ্রাম সম¦লিত বেসামরিক পদে চাকুরীর নিয়োগপত্র শিরোনাম মুদ্রিত থাকে। নিয়োগপত্রে ভিকটিমের নাম-ঠিকানা, স্বাক্ষরসহ নিয়োগপত্রের পেছনে আঙ্গুলের ছাপ নেয় এবং কাউকে কিছু না বলে ভিকটিমদেরকে চুপচাপ বাড়ি চলে যেতে বলে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মোঃ সামসুজ্জোহা @ জুয়েল এই চক্রের মূল হোতা। প্রাপ্ত তথ্যমতে তার নামে ইতোপূর্বে অস্ত্র আইন, নারী নির্যাতন, প্রতারণা ও মাদকসহ মোট ০৮টি মামলা রয়েছে। সে বর্তমানে ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী। ২০১৫ সালের দিকে চক্রের অপর দুই সদস্যের সাথে তার পরিচয় হয়। প্রতারক আলমগীর ও প্রতারক শামীম দুইজনই কম্পিউটার প্রিন্ট, ফটোকপি,অনলাইন জব এপ্লিকেশনের দোকান এর মালিক। তাদের দোকানে অনলাইনে চাকুরির জন্য আবেদন করতে আসা ব্যক্তিদের মাধ্যমেই তারা বিভিন্ন বাহিনী/সরকারি চাকুরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির তথ্য সংগ্রহ করত। সেখান থেকে প্রাপ্ত চাকুরী প্রার্থীদেরকেই তারা প্রাথমিকভাবে টার্গেট করত।
এছাড়াও, প্রতারক মোঃ শামসুজ্জোহা @ জুয়েল শুরু থেকেই নিজেকে বিজিবি'র সদস্য (হাবিলদার মেডিঃ এসিস্ট্যান্ট) হিসাবে ভুয়া পরিচয় প্রদান করে আসছিল। ফলে,অনেকেই তার সাথে চাকুরী পাবার আশায় যোগাযোগ করত বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। মূলত এই চক্রটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদরিদ্র পরিবারের লোকজনকে বাহিনীতে চাকুরির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার উদ্দেশ্যে টার্গেট করত। উল্লেখ্য, চাকুরি প্রার্থীদেরকে নিয়োগ পরীক্ষা,নিয়োগপত্র প্রদান ইত্যাদি সংক্রান্ত ভুয়া এসএমএস প্রেরণের জন্য এই চক্র পৃথক সিম ব্যবহার করে আসছিল।
ধৃত আসামী মোঃ শামীম হাসান তালুকদার’কে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক দলের সক্রিয় সদস্য। সে ভিকটিমদের নিকট সেনাবাহিনী/বিজিবিতে বেসামরিক বিভিন্ন পদে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নিজেকে সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা (লেঃ কর্নেল পদবীর অফিসার) হিসেবে পরিচয় দেয়। ধৃত অপর আসামী সামসুুজ্জোহা @ জুয়েল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাকুরী প্রত্যাশীদের সেনাবাহিনীর অফিস করণিক, বাবুর্চি,মেসওয়েটার, স্টোরম্যান ইত্যাদি পদে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ধৃত আসামী মোঃ শামীম হাসান তালুকদার এর নিকট নিয়ে আসত। ধৃত আসামী মোঃ আলমগীর হোসেন শামীমকে প্রতারণার কাজে সহযোগীতা করে আসছিল। প্রতারক চক্রটি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাকুরী প্রত্যাশীদের ঢাকায় এনে সেনাবাহিনী/বিজিবি’র বিভিন্ন বেসামরিক পদে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখায় এবং ভূয়া নিয়োগপত্র প্রদান করে। পরবর্তীতে ভিকটিমরা নিয়োগপত্র নিয়ে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে যোগদান করতে গেলে ভূক্তভোগীরা জানতে পারে তাদের নিয়োগপত্র ভূয়া। এভাবে তারা সেনাবাহিনী/বিজিবি’র ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করাসহ আনুমানিক প্রায় ২কোটির অধিক টাকা আত্মসাৎ করেছে।গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।