খবরের সময় ডেস্ক:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ছিল আমাদের মীমাংসিত বিষয়। আমরা যদি ধরে নেই সাড়ে সাত কোটি বাঙালির
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জায়গা,ঐক্যের জায়গা সমাধান হয়েছে। আর যদি দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচি বাংলাদেশের সংবিধানের চার
নীতির প্রতিফলন হয়,তাহলে সমতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করার অনন্য ক্ষেত্র ছিল দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি। ১৯৭৫
সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনকের নির্মম হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছিল যাতে বাংলাদেশে দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচি বাস্তবায়িত না
হয়। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র সৃষ্টি ভাবনার পরবর্তীতে সামাজিক বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়িত না হয়। সেই দ্বিতীয় বিপ্লব
ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তান যেমন দায়ী,তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীনের মতো পরাশক্তিও দায়ী। আমরা কিšদ সেই পুঁজিবাদী
সমাজ ব্যবস্থার পেছনে হন্যে হয়ে ঘুরছি। যেটি আমাদের মৌল চেতনার পরিপন্থী ।
বৃহস্পতিবার (১৮নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিবার্তা ২৪ ডটনেট-জাগরণ টিভি আয়োজিত ‘আগামীর
বাংলাদেশ :আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন উপাচার্য।
উপাচার্যড. মশিউর রহমান বলেন,আমাদের মীমাংসিত বিষয় ছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান,রবীন্দ্রনাথ আমাদের অনন্য সম্পদ,নজরুল আমাদের সাহসের,অনুপ্রেরণার অন্যতম কেন্দ্র বিন্দু। এই আমরা
সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম কি সেই মীমাংসিত বিষয়গুলো অব্যাহত রেখেছি? নাকি বিদীর্ণ করেছি,বিধ্বস্ত
করেছি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে। রবীন্দ্রনাথকে বেঁছে নিয়ে তাঁর সেই অনন্য সৃষ্টি ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায়
ভালবাসি’-এটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করলাম। আমাদের এই বুদ্ধিজীবী সমাজ,এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য
থেকে এক সময় বলা হয়েছে জাতীয় সঙ্গীতও পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ার জন্য এর সাথে
সংশ্লিষ্টরাই অনেক খানি দায়ী। শুধু তাই নয়,সামরিক কাঠামোয় যে শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে,সেটি ছিল বৈষম্যমূলক,
মাদ্রাসাভিত্তিক,ধর্মভিত্তিক। সমতাভিত্তিক,কর্মমুখি,অন্তর্ভূক্তিমূলক এবং সার্বজনীন শিক্ষা সেদিন পরাস্ত হয়েছে। রাষ্ট্র গঠনের
দর্শনের নৈতিক জায়গায়কে ধ্বংস করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক,সেকুলার করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে যদি শিক্ষা ব্যবস্থায়
কোন ক্ষতি হয়ে থাকে,তার সবচেয়ে বড় জায়গা- আমরা সেকুলার এডুকেশনকে ধ্বংস করেছি।
উপাচার্য আরও বলেন,‘আমরা কথায় কথায় পাশ্চাত্য শিক্ষার কথা বলি। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যশিক্ষা,সেকুলার শিক্ষা,কৃষি
শিক্ষা,আমাদের নৈতিক শিক্ষা অসম্ভব রকমের ইতিবাচক দিক। জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি এবং ভ্যাক্সিন আমাদের এই প্রাচ্যের
সমাজ যতো সহজে গ্রহণ করেছে,আধুনিক পাশ্চাত্যের সমাজ সেটিকে এখনো গ্রহণ করতে ব্যর্থ। প্রাচ্যের যে নৈতিক এবং
অন্তর্ভূক্তিমূলক শক্তি আছে সেটি আমরা রাজনৈতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মধ্যদিয়ে ধ্বংস করেছি।
অনুষ্ঠানে বিবার্তার সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসির সভাপতিত্বে ও জাগরণ টিভির প্রধান সম্পাদক এফ এম শাহিনের সঞ্চালনায়
আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন,আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ,ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ,বুয়েটের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড.আব্দুল জব্বার খান,কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.এমরান কবির চৌধুরী,কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড.মোহাম্মদ
হুমায়ুন কবির,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন,অধ্যাপক ড.
তানিয়া হক প্রমুখ।