: গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাছা থানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক মামলার এজাহার নামীয় আসামী ছিলেন ৫২ জন। কিন্তু থানায় সেই এজাহার পরিবর্তন করে আসামী করা হয়েছে ১১৮ জনকে। পরিবর্তিত এজাহারে বর্ণিত প্রায় এক ডজন আসামী বাদে বাকি কাউকে চিনেন না বাদী।
থানায় একপ্রকার জোর করে নতুন এজাহারে তার স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বাদীর। মঙ্গলবার টঙ্গী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে গাছা থানার মামলা নং- ২৫(৪) ২০২৫ এর বাদী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্থানীয় নেতা টঙ্গী তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন সাদিক এই অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ এজাহার থেকে প্রকৃত আসামীদের নাম বাদ দিয়ে নিরীহ ও নির্দোষ মানুষকে আসামী করে স্থানীয় যুবলীগ নেতাদের সহযোগিতায় মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্য করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন সাদিক জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত স্মৃতি তুলে ধরে আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর আধুনিক হাসপাতালের সামনের গলিতে শহীদ রেদওয়ান শরীফ রিয়াদ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার কোলে শহীদ হন। ঐদিন রিয়াদের রক্তে আমার পুরো শরীর ভিজে গিয়েছিল এবং রক্তে ভিজে থাকা পোশাক পরে প্রায় ছয় ঘন্টা আমি অতিবাহিত করি। আমার মা সেই ঘটনার সাক্ষী, তিনি সেই রক্তভেজা পোশাক ধূয়ে পরিষ্কার করেছিলেন। এরপর দিন ২০ জুলাই হত্যার উদ্দেশ্যে আমার মাথার বাম পাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীরা। ৫ই আগস্টের স্বৈরাচারীর পতনের পর থেকে আমার জীবনযাপনটা অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে, নিজের চোখে দেখা জুলাইয়ের প্রত্যেকটি নির্মম ঘটনার স্মৃতি বারবার মনে পড়ে। সেই অনুভূতিগুলোই আমার স্বাভাবিক জীবনযাপনকে বাধাগ্রস্থ করে, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমার পড়ালেখা। এমনকি নিজের জীবনের স্বপ্ন পূরণের কথা ভুলে গিয়ে, শুধুমাত্র জুলাইয়ের স্মৃতি ধারণ করে চলতে থাকে আমার প্রতিটি দিন।
জুলাইয়ের এই নির্মম ঘটনাগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে ন্যূনতম হলেও কোন শাস্তির ব্যবস্থাটুকু না করে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যাওয়াটা আমার পক্ষে অসম্ভব ছিলো। আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল, জুলাইয়ে যে সকল সন্ত্রাসীরা জড়িত ছিল তাদের শাস্তির জন্য একটা প্রশাসনিক ব্যবস্থা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবো। সেই উদ্দেশ্যে আমি সাংগঠনিক কাউকে কিছু না জানিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ৫২ জন সন্ত্রাসীকে সনাক্ত করি। যারা জুলাই অভ্যুত্থানে সরাসরি আমার দেখা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল। এই ৫২ জনকে আসামি করে একটা মামলা করার উদ্দেশ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটন গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদের কাছে যাই।
আমি নিজে বাদী হয়ে ২৫(৪) ২০২৫ নং মামলাটি ৫২ জন আসামিকে অভিযুক্ত করে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গাছার ওসি এবং যুবলীগ নেতা-কর্মীরা চক্রান্ত করে মামলাটি নিজেদের মত করে সাজিয়ে আমাকে জিম্মি করে ১১৮ জনকে আসামি করেছে। যাদের মধ্যে প্রায় ৯০ জন আসামিকেই আমি চিনি না। আমি যে ৫২ জন আসামির নামে মামলা করতে চেয়েছিলাম তাদের অনেকের কাছ থেকেই মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে মামলা থেকে বাদ দেন ওসি। অপরদিকে যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে অনেক সাধারণ নিরপরাধ নির্দোষ মানুষকে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক দ্বন্দ্বের যের ধরে তারা আসামি করেছে। আমি প্রতিবাদ করায় এবং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করায় ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ এবং ওই যুবলীগের কর্মীরা আমার বিভিন্ন রকম ক্ষতি করার জন্য নানান ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। এমনকি ফোনে আমাকে হত্যরা হুমকি দিতেছে। আমাকে ফোন করে জানতে চাওয়া হচ্ছে কত টাকার বিনিময়ে আমি চুপ হয়ে যাব। এসবের মাস্টারমাইন্ড হচ্ছেন স্বৈরাচারীর দোসর গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ। এসব ঘটনা আমি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতল কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। এছাড়া আমি নিজে বাদী হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর একটা অভিযোগ দায়ের করেছি। ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ প্রত্যেকটা ব্যাপারেই অনিয়ম এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত। আমার সাথেও তিনি একই আচরণ করার পরে আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে নিয়ে রিচার্জ করেছি এবং দুই তিনটা স্পষ্ট প্রমাণসহ তার অপকর্মের রেকর্ড পেয়েছি।
এব্যাপারে গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ প্রতিবেদককে জানান,ঐ মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তা বাদির সম্মতিতেই করা হয়। মামলার কপিতে যাদের আসামী করা হয়েছে তাদের নাম ঠিকানা দেখেই তিনি মামলায় স্বাক্ষর করেছেন। আমি আসামীদের কাউকে চিনি না। এখন তিনি যে অভিযোগ করছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে এজাহারনামীয় কয়েকজন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন,
৭৪ নং আসামী মোঃ রাজিব খান (৩৮), পিতা- মৃত ওসমান গনি খান,মাতা- রাজিয়া বেগম ,গ্রাম- খাইলকৈর দক্ষিণ (দক্ষিণ খাইলকুর, কালিখেত) ,উপজেলা/থানা- গাছা, জেলা -গাজীপুর,৬৮ নং আসামী হাজী মোঃ জহির উদ্দিন জয় (৪৫), পিতা- মৃত হাজী রহমত আলী,গ্রাম- কলমেশ্বর (পূর্ব কলমেশ্বর),উপজেলা/থানা-গাছা,জেলা-গাজীপুর । ৮৭ নং আসামী মোঃ আলামিন(৩৫), পিতা-ফজল ,ঠিকানা: স্থায়ী: গ্রাম- বাদে কলমেশ্বর, উপজেলা/থানা- গাছা, জেলা -গাজীপুর । পর্যায়ক্রমে সকল আসামীদের আইনের আওতায় আনা হবে ।