মোঃ মোনায়েম হোসেন মন্ডল :
গাইবান্ধা জেলার সাদুলাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের তরফমহদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান কমপক্ষে ১১ জন গরিব শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা অনিয়মের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্নসাৎ করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে উক্ত বিদ্যালয়ে যোগদান করেন । যে মুহূর্তে সরকার দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য উপবৃত্তি সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ মাহফুজার রহমানের সাথে গোপনে আঁতাত করে অফিস ফাঁকি, উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করে আত্নসাৎ, একের পর এক অনিয়ম দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারি ভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছে। এমনকি নিজের দুর্নীতির তথ্য গোপন রাখতে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ সকল নথিপত্র সহ সকল কাগজপত্র নিজ বাড়িতে সড়িয়ে রেখেছেন।
সুত্র জানায়, ২০২২-২০২৩ ইং অর্থবছরে বিদ্যালয়ের ৫টি শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১'শ ২৯ জন হলেও শতভাগ উপবৃত্তির জন্য ১'শ ৪৫ জনের নামের চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উল্লেখিত ১২৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মুল শিক্ষার্থী থেকে বেশ কয়েক জনকে বাদ দিয়ে এবং বাদ দেয়া ছাড়াও কমপক্ষে আরো ১১ জন ভুয়া শিক্ষার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে ২য় শ্রেণির ১৪ রোল নং ধারী মনির মিয়া ও ৫ম শ্রেণির ২৪ নং রোলধারী শিক্ষার্থী মোরসালিন মিয়ার পিতা/ অভিভাবক তরফমহদী গ্রামের আব্দুল মজিদ আকন্দ ২৪/০৭/২০২৩ ইং তারিখে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে সাদুল্যাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করলে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়। পেমেন্ট চক্র জুলাই/২২- ডিসেম্বর/২২ এর এর স্টেটমেন্ট অনুসারে ভুয়া শিক্ষার্থীদের সিরিয়াল নং নিম্নরুপ- ৪০, ৪৩, ৬৫, ৬৭, ৬৯, ৭০, ৮৯, ১২০, ১২৬, ১৪৫ নং বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য। সঠিক ভাবে যাচাই-বাছাই করলে এই ভুয়া শিক্ষার্থীর নামের তালিকা আরো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে পারে।
মজার ব্যাপার হলো- প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান ভুয়া শিক্ষার্থীর নামের সাথে তার মেয়ে নিশাত জাহান, স্ত্রী আয়েশা বেগম এর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও নিজস্ব মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে যোগদানের পর থেকে গত ৪ বছরে উপবৃত্তির লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে আত্নসাৎ করেছেন। নির্ভরশীল একটি সুত্র জানায়, উক্ত প্রধান শিক্ষক নিজের দুর্নীতির খবর যাতে বেড়িয়ে না আসে, সেজন্য বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বিদ্যালয়ে না রেখে সরিয়ে ফেলেছেন। তাই সুত্রটির দাবি- সঠিক ভাবে সরেজমিনে তদন্ত করলে উপবৃত্তি, স্লিপসহ বিভিন্ন খাতের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ থলের বিড়ালের ন্যায় বেড়িয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের কাছে উল্লেখিত ১১ শিক্ষার্থীর ভর্তি রেজিষ্টার ও বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হাজিরা রেজিষ্টার দেখতে চাইলে, তিনি সব খাতাপত্র বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন বলে জানান। কিন্তু উল্লেখিত শিক্ষার্থীরা ক্লাশে আছে কি না দেখতে চাইলেও তিনি প্রথমে ওদেরকে চিনেন না বলে জানান বটে পরে বলেন ওরা আজ স্কুলে আসেনি। ওই ১০ শিক্ষার্থীর বাড়িতে যেতে চাইলেও প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি তাদের বাড়ি চিনি না!
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহফুজার রহমানের সাথে মোবাইলে কথা হয়। তিনি জানান, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। ঢোলভাঙ্গা ক্লাষ্টারের দায়িত্বে নিয়োজিত এটিইও মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর সাথে মোবাইলে কথা হয়। তিনি জানান, আমার কাছে তরফমহদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে করেছে। অভিযোগ পত্রটি আমার কাছে রয়েছে।আগামী সপ্তাহে তদন্ত করা হবে। তদন্তে প্রধান শিক্ষক দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুতরাং ঘিরায় যখন ক্ষেত খায় বা রক্ষক যখন ভক্ষক হয়, তখন বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকায় কি বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে(!) বা পরিস্থিতির শিকার হয়, তা ভুক্তভোগীরাই অনুধাবন করতে পারে। একজন প্রধান শিক্ষক হয়ে সরকারি সব কাগজপত্র বিদ্যালয়ে না রেখে কোন আইনে বাসায় রাখেন! শুধু তাই নয়, ওই প্রধান শিক্ষক উক্ত বিদ্যালয়ে দীর্ঘ চার বছর যাবত অবস্থান করছেন, এই চার বছরে আরো কত অনিয়ম, দুর্নীতি করেছেন, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা দরকার বলে এলাকার ভুক্তভোগী অভিভাবক সহ শান্তি প্রিয় সচেতন জনগণ মতামত ব্যক্ত করেছেন।