নবীন শিক্ষার্থীদের গভীর দেশপ্রেমিক ও বিশ্বজনীন হওয়ার আহবান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের
নবীন শিক্ষার্থীদের গভীর দেশপ্রেমিক ও বিশ্বজনীন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো.মশিউর রহমান। তিনি বলেন,‘এই তরুণ শিক্ষার্থীদের সামনে চমৎকার সময়। জীবনে কখনোই এমন শ্রেষ্ঠ সময় আসবে না। এমন সুন্দর সময় নিজেকে তৈরি করার জন্য আর পাওয়া যাবে না। আজ সোমবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর ভাটারায় ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস) এর স্থায়ী ক্যাম্পাসে ‘শরৎকালীন নবীনবরণ ২০২৩’এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন,‘আপনাদের মধ্যে বিষণ্ণতা আসতে পারে। হতাশা আসতে পারে। মনে হতে পারে-আপনি বিজয়ী হতে পারবেন না। এটা একেবারেই ভুল। মানুষ তার স্বপ্নকে ছাড়িয়ে অনেক বড় হতে পারে। এখানেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। তাকিয়ে দেখুন,যে মানুষের হাত নেই,পা নেই, চোখে আলো নেই-সেই মানুষগুলো আত্মকর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। সেক্ষেত্রে আপনি একজন পরিপূর্ণ মানুষ। আপনার পিতা-মাতা আপনাকে টিউশন ফি দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে। এটি আপনার জীবনে এক পরম সৌভাগ্য। এই সমাজের অন্য অনেক মানুষের তুলনায় আপনি প্রিভিলেইজড। একারণেই জীবন গড়ার এটি এক অনন্য সময়।
নবীন শিক্ষার্থীদের সময়কে কাজে লাগানোর আহবান জানিয়ে সমাজচিন্তক ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আপনারা এই তরুণ্যে ফেসবুক দেখবেন, ইউটিউবে গান শুনবেন, উচ্ছাস করবেন-আমি এর কোনোটিরই বিপক্ষে নয়। কেননা, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তরুণদের বিশ্বের অন্যান্য কিছুর সঙ্গে তাল মেলাতে হয়। তার বন্ধুত্ব শুধু দেশেই হবে না,দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাইরেও হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে,যে তরুণ আজকে চারবছরের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে তার অসংখ্য ই-বুকে,ই-জার্নাল,অসংখ্য ই-আর্টিকেলে একসেস থাকতে হবে। চার বছরের পথ খুব বেশি দীর্ঘ না হলেও এই সময়ে নিজেকে বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আরো বলেন,‘আপনার এই বয়সে পৃথিবীর অন্যান্য জাতিরাষ্ট্রের তরুণ নিজেকে তৈরি করছে। মনে রাখবেন,আগামী দিনের প্রতিযোগিতায় প্রতিটি দেশের তরুণ আপনার প্রতিযোগী। কেননা, যে বিশ্ববাজারে আপনি নিজেকে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন,সেখানে আরো অনেক দক্ষ প্রতিযোগী তৈরি হচ্ছে। এই দেশে আধুনিক প্রযুক্তি, বিজ্ঞান চেতনায়,সৃজনশীলতায় এবং শিল্পায়নে যা যা ঘটবে সেখানে যদি দক্ষ লোক না পাওয়া যায় তাহলে পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে এখানে এসে আপনার প্রতিযোগী হবে। ঠিক তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপের যেকোনো দেশে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে ঘরে বসে ইন্টারনেটের সুযোগ নিয়ে আপনার দক্ষতার জায়গা তৈরি করতে পারবেন-এটিই বিশ্বায়ন। এই সুযোগ সৃষ্টি করাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন,‘আমি অনুরোধ করব,সামনের চারটি বছর যদি আপনারা কাজে লাগাতে পারেন। প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা পড়াশোনা করেন তাহলে আপনার জীবনে আমূল পরিবর্তন আসবে। আপনি আপনাকেও অতিক্রম করতে পারবেন। আপনারা উচ্ছাস করবেন। তারুণ্যের এই উচ্ছাস অপরিহার্য। একইসঙ্গে এটি মনে রাখবেন সুংসংস্কৃতি চর্চায় আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত, লালন চর্চা করতে হবে। আমার বিশ্বাস,এই তরুণরা শুধু বাংলাদেশ নয়,আগামীর পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেবে। আপনাদের হাত ধরেই আগামী দিনে বিশ্বের নেতৃত্ব তৈরি হবে। আপনারা আগামীর পৃথিবী গড়ার জন্য আধুনিক, স্মার্ট নাগরিকে পরিণত হোন। একজন উদার, ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিকে পরিণত হোন। আসুন, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় নিজেদের গড়ে তুলি। আগামীর পৃথিবীর পথ চলাকে আরও সমৃদ্ধ, উন্নত ও যুক্তিযুক্ত করি।
ইউআইটিএসের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. আবু হাসান ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্য প্রদান করে পিএইচপি পরিবারের প্রতিষ্ঠা ও ইউআইটিএসের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট ও ইউআইটিএসের উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য প্রফেসর ড.মো.সাইফুল ইসলাম খানসহ ইউআইটিএসের বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ। অনুষ্ঠানে নবাগত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে চারজন তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠান শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।