নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৯ বছর আগে মডেল ও অভিনেত্রী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নিকে হত্যার আগে সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় তিন্নির বাবার কপালে পিস্তল ধরেন মামলার একমাত্র আসামি বরিশাল-২ আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভি।
সোমবার (৫ জানুয়ারি) ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা জজ কেশব রায় চৌধুরীর আদালতে তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করিম সাক্ষ্য দেয়ার সময় এ কথা জানান।
তিনি বলেন, তিন্নির মৃত্যুর মাসে সম্ভবত সেদিন ৬ তারিখ (২০০২ সাল) ছিল। আমাকে তিন্নি-পিয়ালদের বাসায় ডাকা হয়। সেখানে তিন্নি, পিয়ালসহ অভি ছিল। তিন্নি পিয়ালকে ছেড়ে অভিকে বিয়ে করতে চায়। আমি এ সম্পর্ক মানি না বলি। এসময় অভি পকেট থেকে পিস্তল বের করে আমার মাথার ডান পাশে তাক করে বলে- ওই সালার বেটা, তোর সাহস আছে আমাকে দেখে নিবি? আমি তখন ভয়ে বলি, অভি ভাই আমি তো আপনারে চিনি নাই। তখন অভি বলে- এখন বুঝছোস তো আমি কে?
এরপর অভি পিস্তল নামায়। তারপর আমাকে বলে- এই বাসায় আর আসবি না। আরো বলে- আমি তিন্নিকে নিয়া হজ্জ্ব করতে যাবো। আমি তখন বলি-তুমি কোন আইনে বিয়ে ছাড়া তিন্নিকে নিয়ে ওমরাহ করতে যাবে? পরে আমাকে চলে যেতে বললে আমি রাত ১২ টার দিকে বাসায় চলে আসি জবানবন্দিতে বলেন তিন্নির বাবা।
এদিন তিন্নির বাবার জবানবন্দী শেষে তার চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম সাক্ষ্য দেন। তবে তার সাক্ষ্য প্রদান সম্পূর্ণ না হওয়ায় আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি নতুন দিন ধার্য করেন বিচারক।
এরআগে গত ১৫ নভেম্বর আলোচিত এ হত্যা মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু রায়ের দিন নিখোঁজ থাকা তিন্নির বাবা ও চাচা হঠাৎ করে আদালতে এসে বলেন সাক্ষ্য দিবেন। বিচারক আবেদন মঞ্জুর করে রায় পিছিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজকের দিনটি ধার্য করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি পুনরায় শুনানি করার জন্য আবেদন করলে বিচারক সেটি মঞ্জুর করেন। এরপর রায়ের জন্য আজকের দিনটি ধার্য করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদীর ১ নম্বর চীন মৈত্রী সেতুর ১১ নম্বর পিলারের পাশে মডেল তিন্নির লাশ পাওয়া যায়। পরের দিন অজ্ঞাত পরিচয়ের আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন কেরানীগঞ্জের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. সফি উদ্দিন। এরপর নিহত তিন্নির লাশের ছবি পত্রিকায় ছাপা হলে সুজন নামে নিহতের এক আত্মীয় লাশটি মডেল তিন্নির বলে শনাক্ত করেন। পরে চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্তভার হিসেবে সেই বছরের ২৪ নভেম্বর সিআইডিতে ন্যস্ত হয়। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংসদ গোলাম ফারুক অভিকে একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
পরে ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তিন্নি হত্যা মামলায় আসামি অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এরপর মামলার ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে আজকের একজনের সাক্ষ্য মিলে মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলো। এই মামলায় ২২টি আলামত জব্দ করা হয়েছে।
জানা যায়,গোলাম ফারুক অভির উত্থান ঘটে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে। ছাত্র হিসেবে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। এসএসসি এবং এইচএসসিতে বোর্ড পর্যায়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। নব্বইয়ের গণআন্দোলন ঠেকানোর সময় এরশাদের নজরে আসেন অভি। ওই সময় অপহরণ ও মুক্তিপণ এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। তবে নব্বইয়ের গণআন্দোলনের চরম পর্যায়ে ডিসেম্বরের প্রথমদিকে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। আর মুক্তি পেয়েই পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কায়েম করেন ত্রাসের রাজত্ব। এরপর বিদেশে পাড়ি জমান।