নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘গণমুক্তি জোট’র আত্মপ্রকাশ
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ছড়ি মার্কা প্রতীক নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের নিয়ে আত্মপ্রকাশ করল ‘গণমুক্তি জোট’।
শনিবার (১১ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন এই জোট আত্মপ্রকাশ করে।
সংবাদ সম্মেলনে জোটের চেয়ারম্যান হিসেবে ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ, উপদেষ্টা হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে আবু লায়েস মুন্না,মুখপাত্র হিসেবে সাবেক সচিব কাসেম মাসুদ, কো-চেয়ারম্যান হিসেবে প্রফেসর এ আর খান, সৈয়দ হারুন-অর-রশীদ, আমিনা খাতুন ও সমন্বয়ক হিসেবে মো. আল আমিনের নাম ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া জোটের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে ড. মোমেনা খাতুন, ড. ইশা মোহাম্মদ, ড. মোহাম্মদ আলী, ডা. অধ্যাপক মো. ফজলুল হক, অধ্যাপক ড. শহীদ মঞ্জু, মোহাম্মদ ফজলুল হক, এ আর এম রাজু সিকদার, ইঞ্জি. মুসফিকুর রহমান, গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া ও শেখ আব্দুন নুরের নাম ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জোটের মুখপাত্র কাশেম মাসুদ বলেন, দেশবাসীর আশা ছিল গণতন্ত্র ও আইনের সুশাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচালিত হবে।
কিন্তু বিগত ৫১ বছরেও সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আজও দেখা যায় রাস্তায় ঘরহীন মানুষ, বিপুল সংখ্যক বস্তিবাসী ও নিরক্ষর মানুষ। এখন পর্যন্ত যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা শুধু দল ও নিজেদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়েছে। দেশে অনেক ক্ষেত্রে অনেক ধরনের উন্নয়ন হলেও ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, সন্ত্রাস, লুটপাট, মত প্রকাশে বাধা, বেকারত্ব, বৈষম্য, উচ্চ দ্রব্যমূল্য প্রভৃতি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাও আজ ভেঙে পড়েছে। এসব কারণে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তনে এমন রাষ্ট্রীয় একটি ব্যবস্থার প্রয়োজন, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে ও সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা পরিচালনা করতে পারবে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি দেশের এ অবস্থার জন্য সচেতন নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর দায় রয়েছে। এক্ষেত্রে কেউই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি। দলে গণতন্ত্র চর্চার ঘাটতিতে সুস্থ ধারার রাজনীতিরও বিকাশ হয়নি। সরকার ও বিরোধী দল শুধু দোষ ত্রুটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। সঠিক নেতৃত্বের অভাবও আজ প্রধান জাতীয় সমস্যা। এ অবস্থায় জনগণের সার্বিক মুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দায়িত্বশীল রাজনীতি ও গণতন্ত্র চর্চার প্রতি অঙ্গীকারসহ আমরা ‘গণমুক্তি জোট’ গঠন করেছি। আমরা বিশ্বাস করি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সুস্থ ধারার রাজনীতি জনগণের সংকট নিরসনে মৌলিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। এরই ধারাবাহিকতায় জনগণের ভেতর থেকে সঠিক নেতৃত্ব বের হয়ে আসবে। আর এতেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে শোষণ-বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।
গণমুক্তি জোটের অধীনে কয়টি রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন রয়েছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জোটের চেয়ারম্যান ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ বলেন, সবসময় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক দলের বাইরেও সুশীল সমাজ, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ব্যক্তি বিশেষও নির্বাচনে অংশ নিতে চান, শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন চান। আমরা চাচ্ছি তাদের সম্পৃক্ত করতে।
তিনি বলেন, জোট গঠনের আগে শতাধিক রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনকে আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। অনেকে ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। আরও অনেকে যোগ দেবে। আবার অনেকে জোট গঠনের পর বের হয়ে যায়। তাই আমরা জোটের অধীনে কতগুলো দল বা সংগঠন আছে তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলতে চাই না।
ইফতেখার ফুয়াদ বলেন, আমরা শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন চাই। আমরা যদি অতীতের দুইটি নির্বাচন দেখি, তাহলে দেখব এ নির্বাচনগুলোতে একটি বড় দল নির্বাচন করেনি। তাতে একটি দল ফাঁকা মাঠে গোল দিলো। এখন যদি আবারও নির্বাচন বর্জনের কথা আসে তাহলে এ দল আবারও খালি মাঠে গোল দেবে। আমরাও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি রাখি। সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। আর নির্বাচন কমিশনকেও নিরপেক্ষভাবে সেই ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা মনে করি এবার হয়তো সরকার একতরফা ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারবে না। কারণ আমরাও একটি শক্তি তৈরি হচ্ছি যারা এদেশের জনগণের স্বার্থে কাজ করবে ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে ছাড়বে।