পলাশবাড়ীতে শিশু শ্রমিক দিয়ে ২৭’শ ইট উল্টিয়ে দেওয়া হয় ১০ টাকা
শাহারুল ইসলাম, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স বিহীন অবৈধভাবে গড়ে উঠা ইটভাটা গুলোতে শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে ২৭’শ ইট উল্টিয়ে তাদের হাতে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ১০ টাকা। এ ব্যাপারে সচেতন এলাকাবাসী প্রশাসনের সু-দুষ্টি কামনা করেছেন। শিশু শ্রম নিষিদ্ধ হলেও জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার ইটভাটা গুলোতে চলছে শিশু শ্রম। ইটভাটা গুলোতে রৌদ্রের প্রখর তাপের মধ্যে শুকানোর জন্য ২৭’শ ইট উল্টিয়ে নিয়ে কোমলমতি প্রতি শিশুর পারিশ্রমিক মেলে মাত্র ১০ টাকা। উপজেলার ৭নং পবনাপুর ইউনিয়নের নয়নের মাঠ সংলগ্ন বরকাতপুর গ্রামের খোকা মিয়ার এম.এন.বি/এম.কে.বি ইটভাটা এবং ঢোলভাঙ্গা সাকোয়া ব্রীজের নিচে কৃষি জমির ভিতর গড়ে ওঠা খোকন মিয়ার এ.এল.টি ইট ইটভাটায় ১৭ মার্চ দুপুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। দেখা যায়, চারিদিকে বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ তার ভিতর বিশাল এলাকা জুড়ে মাঠে কাঁদামাটির তৈরি কাঁচা ইট ফেলে রাখা হয়েছে রৌদ্রে শুকানোর জন্য। এর মধ্যে প্রতিটি লাইনে প্রায় ৪৫০টি করে ছয়টি লাইনে ইট সাজানো রয়েছে ২৭’শ। এসব কাঁচা ইট দুই পাশ উল্টিয়ে রৌদ্রে শুকানোর জন্য নিয়োগ করা হয়েছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের। সেখানে শিশুরা ২৭’শ ইট উল্টিয়ে পারিশ্রমিক পায় মাত্র ১০ টাকা। কথা হয় ইট ভাটার শিশু শ্রমিক পারবামুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্র রাসেল, একই বিদ্যালয়ের শাহাদত ৪র্থ শ্রেণী, জান্নাত মিয়া ৩য় শ্রেণী, আলী আকবার ১ম শ্রেণি। তারা জানায়, প্রতিদিন দুপুর ১২টার পর ইট ভাটায় কাজে যোগ দেয় তারা। সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে শিশু শিক্ষার্থীদের পারিশ্রমিক মেলে মাত্র ৪০-৫০ টাকা। রাতে বাড়ি ফিরে পারিশ্রমিকের এ টাকা পরিবারের হাতে তুলে দেয় তারা। শিশু শ্রমিকরা আরও জানায়, এই টাকা দিয়ে অনেক সময় কলম-খাতা কিনে নেন। বিদ্যালয় ছুটির পর কিংবা কোনদিন বিদ্যালয়ে না গিয়ে অন্য শিশুদের সঙ্গে ইটভাটায় কাজ করেন এসব শিশু শিক্ষার্থীরা। কোমলমতি এসব শিশুদের দিয়ে ১০-৫০ টাকার বিনিময়ে হাজার হাজার ইট উল্টিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সত্যিই অমানবিক। ইট ভাটায় শিশুদের দিয়ে কেন কাজ করানো হয় এ বিষয়ে এম.এন.বি/এম.কে.বি ভাটার মালিক খোকা মিয়ার নিকট জানতে চাইলে, তিনি দম্ভ করে বলেন শিশুদের দিয়ে কাজ করে নিয়েছি, আপনাদের কত লেখার আছে লেখেন। অপরদিকে পলাশবাড়ী-গাইবান্ধা সড়কের সাকোয়া ব্রীজের নিচে কৃষি জমির উপর অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা এ.এল.টি ইটভাটায়ও একই অবস্থা । এখানে সাকোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে ইট উল্টিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এখানেও ৩ হাজার ইট উল্টিয়ে নিয়ে ও শুকানো ইট খামাল করে নিয়ে দেওয়া হয় মাত্র ১০-৫০ টাকা। এ অমানবিক কাজটি করছেন এ.এল.টি ইটভাটার মালিক খোকন মিয়া। জানা যায়, ভাটা দু’টির কোন লাইসেন্স নেই, পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমতি পত্র নেই, জেলা প্রশাসকের কোন অনুমতি নেই, সম্পর্ণ কৃষি জমির উপর ও লোকালয় এবং সাকোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোল ঘেষে ভাটাটি অবস্থান। সম্পূর্ণ সরকারি নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ইটভাটা দু’টি স্থাপিত হলেও আজ অবধি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত না হওয়ায় জনমনে নানান মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহল বলছেন ২৭’শ ইট উল্টিয়ে ১০ টাকা পারিশ্রমিক বিষয়টি অমানবিক।
এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজবাউল হোসেন জানান, শিশু শ্রম আইনত নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।