নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলাধীন মৌচাক এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের নূন্যতম বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে গাড়ী,কারখানার গ্লাস ভাঙ্গচুর।
বুধবার (২৫অক্টোবর)২০২৩ইং দুপুরের দিকে তৃতীয় দিনেও কালিয়াকৈর উপজেলা মৌচাকে তৈরি পোশাক,খাদ্যদ্রব্য তৈরি, জুতা, ও ওষুধসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
এসময় পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রথমদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মুখোমুখি হলে শ্রমিকরা পুলিশের উপর ইটপাটকেল ছুঁড়েন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ টিয়ারশেল ও কাদানিগ্যাস নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এক পর্যায়ে ভাংচুর করা হয়েছে বেশকিছু গাড়ি এবং কয়েকটি কারখানার গ্লাস,চেয়ার টেবিল, ল্যাপটপ,ডেস্কটপ ও ইলেকটওনিক্স জিনিসপত্র । কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ জানায়,উপজেলার তেলিরচালা এলাকার পূর্বানী গ্রুপের করিম টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকরা সর্বনিম্ন বেসিক বেতন ১৫ হাজার টাকা করার দাবিতে বুধবার সকাল ৯ টায় কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।
এসময়ে আশপাশের লগোজ অ্যাপারেলস,হাইড্রো অক্সাইড সোয়েটার কারখানা, এপিএস অ্যাপারেলস,বে ফুটওয়ার,কোকোলা ফুডপ্রোডাকস্ লি: কারখানার শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়ে বাসের যাত্রীরা এবং সাধারণ চলাচলকারীরা। সকাল ৯ টা থেকে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করলে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার পল্লিবিদুৎ পর্যন্ত দীর্ঘ ১০-১৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর থেকে জেলা পুলিশ,মেট্রোপলিটন ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়।
মৌচাক ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন জানান,গত কয়েকদিন যাবৎ শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছে । এতে করে কারখানার মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাশাপাশি নিয়মিত যাতায়াতকারীদের চরম দুর্ভগ পোহাতে হচ্ছে ।এই আন্দোলন কতদিন চলবে ঠিক নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এটা কোন শুভ লক্ষণ নয় । যেহেতু তৈরি পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা বেশি,তাই দায়িত্বশীল জায়গা থেকে আমি বলবো,বিজিএমইএ এবং বিকিএমইএ এর কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সমস্যা সমাধান করতে পারেন। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন,শিল্পপুলিশ,স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতা নিয়ে হলেও এই চলমান আন্দোলনের অবসান ঘটানো উচিত।
এদিকে আন্দোলনরত একাধিক শ্রমিক বলেন, আমাদের হেলপারের বেতন ৮ হাজার এবং সুপারভাইজারের বেতন ১১ হাজার টাকা ২০১৮ সাল থেকে। এরপর আর কোন বেতন বাড়ানো হয়নি। দ্রব্যমূল্যের যে দাম তাতে আমাদের জীবন চলছে না। এক কেজি মুলার দাম ৮০ টাকা, ১ কেজি সিমের দাম ২০০ টাকা,আলু পিয়াজ রসুনসহ সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আমাদের ক্রয়সীমার বাহিরে। আপনারা জানেন,গ্যাসের দাম বেড়েছে, বাসা ভাড়া বেড়েছে। আমাদের বেতন বাড়েনি । বাধ্য হয়ে আমরা রাস্তায় নেমেছি, আমাদের বেতন ২৩ হাজার করতে হবে৷ এটাই আমাদের দাবি৷ এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন করে যাব,পুলিশ যতোই আমাদের উপর আক্রমণ করুক আন্দোলন চলবেই। গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মইনুল ইসলাম জানান, শ্রমিকদের আন্দোলন শুরু হলে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা পুলিশের উপর হামলা চালালে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয় । পরবর্তী সময় দুপুর একটা পরে আন্দোলন বন্ধ হয়নি। এ ঘটনায় মহাসড়কে বেশকিছু গাড়ি ভাংচুর হয়েছে।