অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতার ঘটনায় আমরা নই,ক্ষমতাসীনরাই ঘটাচ্ছে:রিজভী
মঙ্গলবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন দেশজেুড়ে ‘অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতা’র ঘটনা ক্ষমতাসীনরাই ঘটাচ্ছে ।
রিজভী বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশজুড়ে ভীতির রাজত্ব কায়েমের অশুভ উদ্দেশ্যে প্রতিদিন নৈরাজ্যে লিপ্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতকারী কর্মীরা। তারা গণপরিবহণে অব্যাহতভাবে অগ্নিসংযোগ করছে আর নিরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জ্বালাও-পোড়াও করে অপরাধীরা খুব সহজেই ঘটনাস্থল থেকে শটকে পড়ছে।
দেশজুড়ে চলমান নাশকতায় ক্ষমতাসীন অপশক্তি জড়িত। প্রকৃতপক্ষে আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ও তাদের আজ্ঞাবাহী পুলিশ সদস্যরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারিত বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে চালক বা তাদের সহকারীদের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, কীভাবে পুলিশ বা ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা তাদের বাসে আগুন দেওয়ার জন্য দায়ী।
গত ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের চাতরি চৌমুহনী বাজারে পুলিশ বক্সের কাছে, ৩১ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে, বাংলামোটর মোড়ে, ২৮ অক্টোবর কাকরাইলের কাছে বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা এবং ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে একটি ট্রাকের আগুন দেওয়ার ঘটনায় ফেনীর স্থানীয় যুবলীগ নেতা নুরুল উদ্দিন টিপুকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার ও ১৪ নভেম্বর নাটোরের তাশরীক জামান রিফাত নামে আওয়ামী লীগকর্মীকে মুখোশসহ গ্রেপ্তারের পর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন রিজভী।
প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, দেশের সর্বত্র পুলিশ বা র্যাবের শত শত পেট্রোল টিম এবং বিজিবির শত শত প্লাটুন অস্ত্রসজ্জিত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র সহযোগে পুলিশের পূর্ণাঙ্গ সুসংহত টহল। বাংলাদেশ যেন পরিণত হয়েছে এক যুদ্ধক্ষেত্রে।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ওদের এসব কর্মকা- বারবার প্রমাণিত হয়েছে, বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে এসেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছেৃ কীভাবে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য বাসে অগ্নিসংযোগে লিপ্ত হয় আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতকারী নেতাকর্মীরা। ২০১৪ সালে ছাত্রলীগের তিন জন সদস্যকে বাসে অগ্নিসংযোগের সময় হাতেনাতে আটক করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ২ জন ছাত্রলীগ সদস্য ককটেল ও পেট্রোলবোমাসহ আটক হয়েছিল, ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় পেট্রোল বোমাসহ গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা পর বাধ্য হয়ে পুলিশ দুজন যুবলীগ কর্মীকে ছেড়ে দিয়েছিল।
রিজভী আরও বলেন, ২০১৪ সালে বিরোধী দলের আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ তার নিজস্ব বিহঙ্গ পরিবহণে পেট্রোল দিয়ে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে গণমাধ্যম মারফত জানা যায়। সেখানে আগুনে ১১ জনের মৃত্যুও হয়েছিল। ২০০৬ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগ ট্রেন এবং বাসে আগুন দিয়ে, পরিবহণ শ্রমিকদের ওপর হামলা করে মানুষ হত্যা করেছিল।
শেরাটনের সামনে গান পাউডার মেরে বাসে আগুন দেওয়াসহ এমন অজস্র দৃষ্টান্ত আছেৃ যেখানে আওয়ামী লীগ তাদের বিদ্বেষপূর্ণ-বিভাজিত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সহিংসতাকে ব্যবহার করেছ। মানুষ হত্যা করে, জনগণের সহায়-সম্বল ধ্বংস করে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেই দায় বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে, মিথ্যা মামলায় ভিন্ন দল ও মতের ওপর দমন-নিপীড়ন চালাবার যে বীভৎস রাজনীতি আওয়ামী লীগ লালন করেৃ আমরা তাকে ঘৃণাভরে ধিক্কার জানাই। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে পুলিশ ৪৭৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং বিভিন্ন মামলায় ১ হাজার ৭২০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করেছে।
আমাদের আগামীকাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে যে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে সেই কর্মসূচিতে দেশের জনগণ, দলের নেতাকর্মী, সমমনা জোট ও দলের সকল নেতাকর্মীরা অবরোধ কর্মসূচিকে স্বার্থক করবেন, সাফল্যমণ্ডিত করবেন। এই অবরোধ কর্মসূচি আমাদের দেশের গণতন্ত্র ও দেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ। আমরা সত্যের পথে আছি, আমরা ন্যায়ের পথে আছি, আমরা মানুষের কল্যাণের পথে আছি, আমরা গণতান্ত্রিক দর্শনের পক্ষে আছি।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি বুধবার ভোর ৬টা থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। গত ২৮ অক্টোবরে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দেওয়ার পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো টানা কর্মসূচি করে যাচ্ছে। গত রোববার থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের পর একদিন বিরতি দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো।