রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত দেশের বিভিন্ন গার্মেন্টস এক্সেসরিজ কোম্পানীর নিকট ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে টাকা পরিশোধ না করে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। এমন এক প্রতারক সালাউদ্দিন ভূইয়া নিজেকে বিভিন্ন কোম্পানীর সিইও/মার্কেটিং ম্যানেজার/মার্চেন্ডাইজার ইত্যাদি পরিচয় প্রদান করে বিভিন্ন গার্মেন্টস কোম্পানীর নিকট হতে জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য ক্রয়ের জন্য ক্রয়পত্র বিতরণ করে। ভ‚য়া ক্রয়াদেশ প্রাপ্ত হয়ে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ কোম্পানীগুলো ক্রয়াদেশ অনুযায়ী সম্পূর্ণ পণ্য ডেলিভারী করে। পরবর্তীতে সালাউদ্দিন ভূইয়া পণ্য ডেলিভারি পাওয়ার পর তাদের টাকা পরিশোধ না করে উক্ত পণ্যগুলো বিভিন্ন কোম্পানীর নিকট বিক্রি করে দেয়। ভুক্তভোগীরা তার নিকট থেকে পাওনা টাকা ফেরত চাইলে সে টাকা না দিয়ে বরং তাদের সাথে খারাপ আচরণসহ নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা/আইজিপি’র আত্মীয়/সাংসদের আত্মীয় ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে থাকে। বর্ণিত বিষয়ে গত ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান র্যাব-১ এর নিকট আইনি সহায়তা কামনা করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। ফলশ্রুতিতে র্যাব ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর মহাখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক এ এম এম সালাউদ্দিন ভূইয়া (৫৫), চাঁদপুর’কে গ্রেফতার করে। উক্ত অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত বাঁধাইকৃত ০১ টি ফটোফ্রেম, সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত ০১টি করে গেঞ্জি, ক্যাপ, মানিব্যাগ ও মেডেল, ০৪ টি জাল লেটার প্যাড, ০১ টি জাল সীল, ০২টি জাল ক্রয়াদেশ, ০২ টি জাল সোয়াচ প্যাড, ০২টি চেক বই,০৩ টি মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন কন্টেন্ট এবং নগদ ৯,৮৩০/- টাকা জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন বিভিন্ন প্রতারণার বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন ভূইয়া’কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে,সে নিজেকে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সিইও/মার্কেটিং ম্যানেজার/মার্চেন্ডাইজার ইত্যাদি পরিচয় প্রদান করে বিভিন্ন গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এর ক্রয়পত্র বিতরণ করে থাকে। ক্রয়াদেশ অনুযায়ী কোম্পানীগুলো এক্সেসরিজ ডেলিভারি দেয়ার পর তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করে সে উক্ত এক্সেসরিজগুলো অন্য কোম্পানীর নিকট বিক্রি করে দিত। এছাড়াও সে নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা/ আইজিপি’র আত্মীয়/ সাংসদের আত্মীয় ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে আসছিল মর্মে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন ভূইয়া বিগত প্রায় ৫ বছর ধরে সে বিবিধ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে প্রতারণা করে আসছে। ভূক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায় যে, সে কোটি টাকার অধিক আত্মসাৎ করেছে। বর্তমানে সে মহাখালীর একটি অফিসে সাবলেট ভাড়া নিয়ে বিগত ৩ মাস যাবত এহেন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
গ্রেফতারকৃত সালাহউদ্দিন আরও জানায় যে, সে কোন ঠিকানায় ৬ মাসের বেশি অবস্আন করে না। এছাড়া ফটোশপ এর মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি এডিট করে মূলত প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে থাকে। ইতোপূর্বে তার নামে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে আদালতে প্রতারণার মামলা ও বিভিন্ন থানায় ৩ টি অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানের মামলা প্রক্রিয়াধীন।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।