শনিবার (১১ মার্চ)২০২৩ইং বিকেলে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,আমরা নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। ২০৪১ সালে আমাদের জনগোষ্ঠী স্মার্ট হিসেবে গড়ে উঠবে। আমাদেরগ্রাম, কৃষি সব কিছু হবে স্মার্ট। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের উন্নয়ন করা। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশকে আরও উন্নত করবো, এজন্য ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ গ্রহণ করেছিলাম আমরা। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।
আমি শুনেছি, বিএনপির কোনো এক নেতা আছে নাকি সারাদিন মাইক নিয়ে বসে থাকে। তারা বলে, আমরা নাকি দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছি। ময়মনসিংহবাসী আপনারাই বলুন, এই যে আমরা ৭৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন ৩০টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি এগুলো কি ধ্বংসের নমুনা? তাহলে ওরা এত মিথ্যা কথা বলে কেন? বিদ্যুৎ উৎপাদন আমরা বাড়াই, আর বিএনপি কমায়। বিএনপির আমলে দুর্নীতিবাজরা বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছিল। এখন বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। তাই আমরা উৎপাদন বাড়িয়েছি। আমরা চাই, সব ঘর আলোকিত হোক। বিদ্যুৎ না হলে এত কথা মাইকে আসতো কীভাবে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আজকে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি প্রত্যেকের ঘরে ঘরে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাংলাদেশ একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। আমরা ভূমিহীন মানুষকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। আমরা যখন মানুষের জন্য কাজ করি, বিএনপি তখন মানুষের ভূমি দখল করে।
উদাহারণ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গফরগাঁওয়ে আমার একজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে পাশ দিয়ে কলাগাছের চারা পুঁতে দিয়েছে। আমি সেখানে গিয়ে বাড়ির সীমানায় চুলা দেখতে পাই। এই চুলার চিহ্নটুকু না থাকলে কারও বোঝার উপায় ছিল না এই বসতবাড়িটা বিএনপির সন্ত্রাসীরা পুকুর কেটে দখল করে বসে আছে।
তিনি বলেন, ওরা মানুষের সম্পত্তি দখল করে, আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে যাদের ঘর নাই, বাড়ি নাই, মাথা গুজার ঠাঁই নাই, রাস্তার পাশে পড়ে থাকে, তাদেরকে ঘরবাড়ি বানিয়ে দেয়। তাদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দেয়। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না।
দেশ আজ ডিজিটাল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, কথা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে মোবাইল ফোন তুলে দিয়েছিলাম। এখন সকলের হাতে মোবাইল ফোন। আজকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ওয়াইফাই কানেকশন পাওয়া যায়। ব্রডব্যান্ড নিয়ে এসেছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। স্কুলগুলোতে কম্পিউটার ল্যাব করে দিচ্ছি। দেশে প্রায় ৫ হাজার ২৭২টি রিসার্চ সেন্টার করে দিয়েছি। ৮ হাজার পোস্ট অফিসে ডিজিটাল সেন্টার করা হয়েছে। আজকে সারা বাংলাদেশে এই ডিজিটাল সেন্টারে সারাদেশের ছেলে-মেয়েরা কাজ করছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে কাজ করে টাকা কামাতে পারছে যুব সমাজ। সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিয়েছি। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি, যেখান থেকে বিনা জামানতে টাকা লোন নিয়ে বিদেশ যেতে পারছেন শ্রমিকরা। যুব সমাজের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, কথা দিয়েছিলাম প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেব। সে কথাও আমরা রেখেছি। এমনকি যেখানে গ্রিড লাইন নেই, সেখানে সোলার প্যানেল করে দিয়েছি। দুর্গত এলাকাতেও সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। বয়স্ক, বিধবা স্বামী-নিগৃহীতা সকলের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা আওতায় আমরা ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যাতে করে কেউ কষ্টে না থাকে। আমাদের মা-বোনদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছি। আমরা চাই আমাদের দেশের প্রত্যেকটা মানুষ যেন উন্নত জীবন পায়।
জনসভায় আসা নেতাকর্মী ও মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা অনেক কষ্ট করে জনসভায় এসেছেন। এই সভাকে সাফল্যমণ্ডিত করেছেন। আপনাদের উদ্দেশে বলতে চাই, নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি দেবার কিছু নাই, আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই।
জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং সংসদ সদস্যরা বক্তব্য দেন।
এর আগে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে জনসভাস্থল সার্কিট হাউস মাঠ থেকে একযোগে ১০৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং প্রায় ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সরকারপ্রধান। দুপুর ২টা ৫৮ মিনিটে তিনি জনসভা মঞ্চে ওঠেন।
পরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম,মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন।