কুমরসই দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসা শিক্ষার্থী-৬,শিক্ষক কর্মচারী-১৪
মোস্তফা মিয়া পীরগন্জ (রংপুর)থেকে :
বেলা ১২টা ৫ মিনিট। কমন রুমে অলস সময় কাটাচ্ছে সর্বসাকুল্যে ৪ শিক্ষার্থী। দু'জন ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাকী দু'জন ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। পায়ে হেঁটে মাদ্রাসার প্রতিটি শ্রেণি কক্ষ ঘুরে দেখা মেলে ৮ম শ্রেণির দু'জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছেন এক শিক্ষক । ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে কোন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যায়নি। শিক্ষক/শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা খোশগল্পে মত্ত অফিস রুমে। সোমবার সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে পীরগঞ্জের টুকুরিয়া ইউনিয়নের কুমরসই দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসায়।
ওই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার সুলতান মাহমুদ। তিনি নিজেই কম্পিউটার শিক্ষক। কম্পিউটার কক্ষ না থাকলেও অফিসের পাশেই যত্রতত্র অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেল পুরনো একটি পিসি ও একটি মনিটর। যার উপর ধুলো বালির স্তর পড়ে আছে। যেন কতদিন ধরে ওই সব স্পর্শই করা হয়নি।
এ ব্যাপারে সুপার সুলতান মাহমুদ জানান,উক্ত মাদ্রাসায় এবতেদায়ী ও দাখিল শাখা মিলে মোট ১'শ ৪৫ জন শিক্ষার্থী। গড়ে প্রতিদিন ৭৫/৮০ জন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়। কিন্তু আজকে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি এত নগন্য কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তাৎক্ষণিক তিনি নিশ্চুপ থাকলেও পরে বলেন, গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ নারী শিক্ষার্থী দরিদ্র। তাই তারা জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন চুলের কারখানায় চাকুরী করে।
এদিকে গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদ্রাসার বাহিরে প্রায় অর্ধশতাধিক ক্ষিপ্ত অভিভাবক ওই মাদ্রাসার নানা অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাদের মধ্যে ওই মাদরাসার সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন,অভিভাবক জব্বার আলী,ময়নুল হোসেন ও রুহুল আমিন আক্ষেপ করে বলেন,ভারপ্রাপ্ত সুপার সুলতান মাহমুদ মাদ্রাসায় কখন কিভাবে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছেন,আমরা তা কিছুই জানিনা। এ জন্য শ্রেণি কক্ষে নোটিশ করা,খসড়া ভোটার তালিকা করা, চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করাসহ ম্যানেজিং কমিটির গঠন ও কার্যাবলী সম্পন্নে প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগের বিধান থাকলেও তা মানা হয়নি। অথচ গোপনে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন দেখিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়েছে মর্মে প্রকাশ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করা হয়েছে।
তারা আরো জানান,কুমরসই দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসায় ছেলে মেয়ে পড়েনা অথচ তাকেও নাকি ম্যানেজিং কমিটির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাছড়া ওই মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ভাড়াটে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মন্ডলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হলে তিনি জানান,কুমরসই দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসায় কমিটি গঠনে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,পীরগঞ্জের বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।