“ফ্রীল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কি ? "ফ্রীল্যান্সিং নিয়ে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ"
বর্তমানে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা বিশ্বজুড়ে বেশ সুনাম অর্জন করেছে ৷ বাংলাদেশের যে হারে ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী খাত হয়ে দাঁড়াবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষকের মতে ২০২৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দ্বিতীয় খাত হতে পারে এই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর। বিশ্বের অন্যান্য সকলদেশের মতো বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা আজ অতুলনীয় ভূমিকা রাখছে দেশের জিডিপিতে। ফ্রীল্যান্সারা ও একধরনের রেমিটেন্স যোদ্ধা।
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা বলা অসম্ভব কারণ বাংলাদেশে কোন লিখিত ডাটাবেজ নেই ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে ৷ বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী দিনে দিনে ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ গ্লোবাল গিগ ইন্ডেক্স অনুযায়ী, ২০২১ সালের করোনা ভাইরাসের পর বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা আনুমানিক ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
“ এর মধ্যে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় হল, বিশ্বের টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সারের ৬৪ শতাংশই বাংলাদেশি। ”
অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিউটের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিশ্বে দ্বিতীয়। ভারতের পরেই অবস্থান। বিশ্বের সব বড় বড় ফ্রিল্যান্সিং সাইটের হিসাব থেকে নিয়ে ২০১৭ সালে অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট বলেছিল, বাংলাদেশে সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার আছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও আয়ের দিক থেকে অষ্টম এবং বাংলাদেশের আয় সেখানে ১০ ডলারের কম। ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিপাইন বাংলাদেশের চেয়ে ঘণ্টায় বেশি আয় করে।
জেনে অবাক হবেন, ফ্রিল্যান্সিং খাত থেকে বছরে এক বিলিয়ন ডলার আয় করছে বাংলাদেশ। যেগুলো এখনো ফ্রীল্যান্সিং এর খাতায় যোগ হচ্ছে না সেগুলো বাদই দিলাম।
২০২৫ সালের মধ্যে এ খাতের আয় ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
চলুন জেনে আসি,
ফ্রীল্যান্সিং সেক্টরে উন্নতির জন্য বাংলাদেশ সরকার যে যে পদক্ষেপ নিয়েছে
- বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত ফ্রীল্যান্সারদের পরিচয়পত্র প্রদান ও বিভিন্ন ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করেছেন।
- এল ই ডি পি ও এস ই আই পি মতো অনেকগুলো প্রফেশনাল ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেছে।
- বিভাগীয় ও জেলায় আইটি পার্ক তৈরি এবং এতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
- ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ৫৫টি স্বীকৃত প্লাটফর্ম নির্ধারণ করে ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পাবেন ফ্রিল্যান্সাররা।
- যুব উন্নয়ন কর্ম সূচিতেও দক্ষতা অর্জনের কোর্স গুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে।
- ফ্রীল্যান্সারদের আইডি কার্ড করে দিচ্ছে এবং এটি ব্যবহার করে যেকোনো ব্যাংকিং সুবিধা নিতে পারবে।
যে বিষয় গুলো আপনাকে ফ্রীল্যান্সিং করতে আরও আগ্রহী করে তুলবে
- বাংলাদেশ সরকার যে যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো আমাদের অনেক উপকারে আসছে।
- ফ্রিল্যান্সারদের জনবহুল শহরের রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম ঠেলে অফিস যেতে হয় না।
- সারা দেশের যেকোনো স্থানে ইন্টারনেট আছে।
- বেঁচে যায় অনেক কর্ম ঘণ্টা, যাতায়ত খরচ বা আলাদা খাবার খরচ।
- পরিবারের যে কোন সুবিধা অসুবিধায় সময় দেয়া যায়।
- অনেক কর্মক্ষেত্র বেড়েছে তাই আমাদের দেশের ভিতরেও ফ্রীল্যান্সিং করার সুযোগ হয়েছে।
কিছু সমস্যাও আছে যেগুলোর জন্য আমরা বাংলাদেশিরা এগোতে পারছি না !
এগুলো হচ্ছে……
- যেহেতু প্যাপাল সারা বিশ্ব এ জনপ্রিয়, বায়াররা প্যাপালেই লেনদেন করতে চায়। এই জন্য প্যাপাল বাংলাদেশে নিয়ে আশা জরুরী হয়ে পরেছে।
- ফ্রিল্যান্সিংয়ের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বাংলাদেশের অধিকাংশ ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড আন্তর্জাতিক মানের নয়।
- ইংরেজিতে দুর্বলতার কারণে তরুণরা ফ্রিল্যান্সিং সাইটে কাঙ্ক্ষিত কাজ পায় না।
- ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসার জন্য অনেক অনেক প্রচারণা না থাকায় অনেকই জানতে পারছে না।
- ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য সারা দেশে উচ্চগতির নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা দরকার। সরকার থ্রিজি ও ফোরজির ইন্টারনেট সেবার কথা বললেও অনেক স্থানে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পর্যাপ্ত নয়, ফলে প্রত্যন্ত এলাকার অনেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ে যুক্ত হতে পারছে না।
- ফ্রিল্যান্সিং আমাদের দেশে পেশা হিসেবে স্বীকৃত নয়, ফলে অনেকে এ পেশায় আসতে হীনম্মন্যতায় ভোগে।
- ফ্রীল্যান্সিং শেখানোর নামে প্রতারনা বা ন্যূনতম শিখিয়ে ফ্রীল্যান্সিং মার্কেট প্লেস গুলতে জয়েন করিয়ে দেয়।
পরিশেষে একটা পরিসংখান দিয়ে শেষ করবো ।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৪ কোটি ৪০ লাখ তরুণদের প্রতি ১০ জনের একজন বেকার মানে ৪৪ লক্ষ। প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয় পেরোনো হাজার হাজার শিক্ষার্থী মনের মতো চাকরি না পেয়ে বেকার হয়ে বসে আছেন। ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে আমরা কিন্তু খুব সহজেই দক্ষতা অর্জন করে ফ্রিল্যান্সিং করতে পাড়ি।