বিদ্যুৎ এর ভেলকিবাজিতে গরমে নাকাল দেশবাসী
রাজধানী ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশজুড়ে চলছে উত্তপ্ত আবহাওয়া ও চলমান লোডশেডিংয়ের কারণে ঢাকার নগরজীবন পুরো দেশবাসী বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে।
রাজধানীতে এলাকাভেদে গড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা ধরে লোডশেডিং হচ্ছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় সময় লাগছে আরও বেশি। শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন অন্যান্যরাও। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। রাজধানীর শ্যাওড়াপাড়ার এক বাসিন্দা বলেন, শ্যাওড়াপাড়া-কাজীপাড়া এলাকায় সারা দিনে ৬-৭ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুদের কথা বলে,কিন্তু আমরা তো দেখি না। সব কটি বিভাগীয় শহর বাসীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ।কেউ কেউ শহর ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছে একটুখানি শান্তির পরশ পাওয়ার জন্য কিন্তু না সেখানেও একই অবস্থা ঘনঘন লোডসেডিং ।
অন্যদিকে মহাখালীর দক্ষিণ পাড়া এলাকার বাসিন্দা বলেন, গত কয়েকদিন একে তো তাপমাত্রা অতিরিক্ত; তার ওপর, মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং। অনেকে মিলে একটা বাসায় থাকি। হাঁসফাঁস অবস্থা হয়ে যায় আমাদের। উত্তরার এক বাসিন্দা বিলেন, আগে লোডশেডিং তেমন হতো না। গত কয়েকদিন ধরে এত বেশি হচ্ছে চিন্তা করার মতো না। দিনে-রাতে মিলিয়ে ৪-৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। লোডশেডিংয়ের সঙ্গত কারণ হিসেবে জানা গেছে, তিন বছর আগে উৎপাদনে আসার পর এই প্রথম পুরোপুরি বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের। এর আগে ডলার সংকটে কয়লা না কিনতে পারায় রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রও দুই দফা বন্ধ হয়েছিল। পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের একটি ২৫ মে বন্ধ করা হয়। ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বাকি আরেকটি ইউনিট চলবে ২ জুন পর্যন্ত। কয়লা না থাকায় সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হবে দেশের বৃহত্তম এ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি। চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে ২০২০ সালে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। কেন্দ্রটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা কিনতে ঋণ দেয় চীনা অংশীদার চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল মাস পর্যন্ত বকেয়া বিল দাঁড়ায় প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন ডলার।
এ বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় সিএমসি কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে। ঢাকায় শুক্রবার তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা হিউমিডিটির কারণে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস অনুভূত হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবার এক দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মে মাসের মতো জুনেও বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকতে পারে। রয়েছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে দেশে ১ থেকে ২টি বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু (৩৬-৩৮ক্ক সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৩৮-৪০ক্ক সেলসিয়াস) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ফলে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকতে পারে। এ সময় বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের কোনো আভাস নেই।