চলতি মাসেই দেশে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা
চলতি মাসের যেকোন সময় দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। হতে পারে স্বল্প মেয়াদি আকস্মিক ও আগাম বন্যা। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে এক থেকে দু’টি লঘুচাপ ।
এর মধ্যে একটি এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তাছাড়া নদ নদীর উজানভাগে উত্তর-পূর্ব ভারতে অতিবৃষ্টি এবং ভারতীয় ঢলের কারণে আকস্মিক ও আগাম বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কাও রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি মে মাসে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) দেশে এক থেকে তিন দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি থেকে তীব্র আকারে কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। তাছাড়া ৩ থেকে ৫ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া এ মাসে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ সময়ে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও ঊর্ধ্বে উঠে যেতে পারে।
তাছাড়া এ মাসে দেশের অন্যত্র এক থেকে দু’টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। মাঝারি তাপপ্রবাহে তাপমাত্রা থাকবে সর্বোচ্চ ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সে.। এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশিই থাকতে পারে। সূত্র জানায়, চলতি মে মাসে দেশে সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিক হার বা পরিমাণে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। তবে এপ্রিলে সারা দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় সার্বিকভাবে গড়ে ৬৬ দশমিক ৪ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিভাগ বা অঞ্চলওয়ারি এই কম বৃষ্টিপাতেও ছিল অসঙ্গতি। এপ্রিলে ঢাকা বিভাগে বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক পরিমাণ ১৪৮ মিলিমিটারের স্থলে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ২৪ দশমিক ৫ মি.মি.। অর্থাৎ ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৩ দশমিক ৪ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৫ দশমিক ৪ শতাংশ কম, বরিশাল বিভাগে ৮১ শতাংশ কম, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৯ দশমিক ৪ শতাংশ কম, রাজশাহী বিভাগে ৫৫ শতাংশ কম, রংপুর বিভাগে ৬৪ শতাংশ কম, খুলনা বিভাগে ৩৭ শতাংশ কম ও সিলেট বিভাগে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে গত মার্চ মাসে (ফাল্গুন-চৈত্র) দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশই বেশি বৃষ্টিপাত হয়। এপ্রিল মাসে স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় তাপীয় লঘুচাপ অবস্থান করে। ফলে ৪ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ, ১৩ থেকে ২২ এপ্রিল মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ২৪ থেকে ৩০ এপ্রিল মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। সূত্র আরো জানায়,পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে পূবালী বায়ুপ্রবাহের সংযোগের ফলে গেল মাসের বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে বজ্রপাত ও অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ কোথাও কোথাও কালবৈশাখী ঝড় হয়েছে।
গত মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সে. (১৭ এপ্রিল)। এপ্রিল মাসে দেশে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ২ দশমিক ২ সে. এবং দশমিক ২ ডিগ্রি সে. বেশি ছিল। সারা দেশে গড় তাপমাত্রা এক দশমিক ২ ডিগ্রি সে. বেশিই ছিল। গত কয়েকদিন যাবৎ চট্টগ্রাম বিভাগসহ দেশের অনেক জায়গায় মৃদু তাপপ্রবাহের পাশাপাশি অনেক জেলায় বিক্ষিপ্ত হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কোথাও কোথাও বজ্রবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে পশ্চিমা লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে।