মোস্তফা মিয়া,পীরগঞ্জ (রংপুর):
রংপুরের পীরগঞ্জের বড়বিলার স্লোইজ গেট এলাকায় আখিরা নদীর দু’পাড়ের শোভাবর্ধনে দৃশ্যমান দৃষ্টিনন্দন সহ পর্যটকদের আকৃস্ট করতে নদীতে নামতে নদীর দু’পাড়ে সিঁড়ি, বিশ্রামে বেঞ্জ, ওয়াক ওয়ে, বৃক্ষরোপন সহ পাড় ও ঢালে ব্লক বসানোসহ কয়েক কোটি টাকার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
নদী খনন ও নদীর দু’পাড় ও ঢালে ব্লক বসানোর কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প। বড়বিলা এলাকায় পর্যটকদের আকর্ষন বাড়ানোসহ প্রকৃতি প্রেমিদের বাড়তি সুবিধায় স্থানীয়দের দাবীর প্রেক্ষিতে নদীতে নামার সিঁড়ি, বিশ্রামে বেঞ্জ, ওয়াক ওয়েসহ আরসিসি সড়ক নির্মাণে পীরগঞ্জ পৌরসভা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পৃথক পৃথক প্রকল্প গ্রহন করে।
পাউবো তথ্যমতে, বালুয়া হাটের মরহুম কফিল উদ্দিন সরকার ব্রীজ থেকে বড়বিলা পর্যন্ত আঁখিরা নদীর দু’ই পাড়ে ৩কিলোমিটার করে ৬কিলোমিটার গুড ম্যান, ভিশন ও গুণ বাবু নামে পৃথক ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। প্রত্যোকে ২টি করে পৃথক পৃথক প্যাকেজে নদীর দু’দিকের দু’পাড় ও ঢালে ২ কিলোমিটার করে খননসহ বøক বসানোর কাজ প্রাপ্ত হয়।
এরমধ্যে বড়বিলের বিল সংলগ্ন এলাকার স্লোইজ গেটের পুর্বদিকে গুড ম্যান নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বাড়তি কাজ হিসেবে নদীর দু’পাড়ে নদীতে নামার ২টি করে ৪টি সিঁড়ি, বিশ্রামে ৫টি করে ১০টি বেঞ্জ, ৩০০ মিটার করে ৬০০ মিটার ওয়াক ওয়ে রয়েছে। এছাড়াও বনায়ন প্রকল্পে পাউবো ৬ হাজার ৭শ’ ৭৫টি বৃক্ষরোপন এস্টিমেট (প্রাককলন) হয়।
রোববার (২ জানুয়ারী)২০২৫ইং নদীর দক্ষিণ পাড়ে নদীতে নামার সিঁড়ি ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। মরাপাথর, সিংগেলস বা চকলেট পাথর সহ ময়লা আর্বজনা মিশ্রিত স্থানীয় উন্নত মানের ভিট বালু দিয়ে ঢালাইয়ের কাজ করা হচ্ছিল। সে সময়ে পাউবো’র দায়িত্বরত এসও ইমরান অনুপস্থিত থাকলেও ওয়ার্ক এসিস্টেন্ট নাসির আহম্মেদ ছিলেন। চোখের সামনে নি¤œমান সামগ্রি ব্যবহৃত হলেও সেদিকে ওয়ার্ক এসিস্টেন্টের আগ্রহ ছিল না। অভিযোগে মায়াবাজার, বায়ান্নর আলো, সমকাল, কালেরকন্ঠ, যুগান্তরের, বাংলাদেশ সমাচার, যায় যায় কাল, তিস্তাসহ বিভিন্ন পত্রিকার কয়েকজন মিডিয়া কর্মী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। কয়েকদিন আগেও ১১.২৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭.২ মিটার প্রস্তে একটি সিঁড়ি সিংগেলস বা চকলেট পাথরসহ উন্নতমানের ময়লা আর্বজনা মিশ্রিত স্থানীয় ভিট বালু দিয়ে ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
নিম্নমানের সামগ্রী ও কাজের অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে মুঠোফোনে নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম ও এসডিও আখিরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হয়। এসডিও আখিরুজ্জামান সদুত্তোর না দিলেও নির্বাহী প্রকৌশলী কাজ বন্ধসহ উর্দ্ধত্বণ কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে ব্যবস্থার কথা জানান। উর্দ্ধত্বণ কর্মকর্তার ফোন পেয়ে কয়েক ঘন্টা পরই মিকচার মেশিনের আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। নির্মাণ শ্রমিকরা ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হুকুমে। ঘন্টা তিনেক পরই আবারও ঢালাই কাজ আরাম্ভ হয় এবং ঘন্টা দুয়েক পরই আবার তা বন্ধ হয়। রংপুরের স্থানীয় পত্রিকায় পীরগঞ্জে বড়বিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের নামে পুকুর চুরির সংবাদ প্রচারিত হয়। এতে টনক নড়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন ঢালাইয়ে ব্যবহৃত সিংগেলস বা চকলেট পাথরের একটি স্তুপের সবগুলো পাথর অন্যত্র সড়িয়ে নিতে দেখা গেছে। পুর্বে সম্পন্ন করা একটি সিঁড়ির ঢালাইয়ে ব্যবহৃত সিংগেলস বা চকলেট পাথরের স্তুপ আজও সেই সিঁড়ির সন্নিকটে পড়ে রয়েছে। নিম্মান সামগ্রী পাথর ও বালু’র ব্যবহারে সম্পন্ন করা সিঁড়ি ভেঙ্গে পুণরায় নির্মাণ করার দাবী জানিয়ে এলাকাবাসীরা জানান, সিঁড়িতে আরসিসি ঢালাইয়ের আগে রড বাঁধাইয়ের আগে বøকের উপরে করা সিসি নি¤œমানের ইটের খোয়া দিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিটি সিসি ঢালাইয়ে ১নং পিকিটের খোয়ার পরিবর্তে ২ ও ৩ নং ইটের টুকরো ব্যবহৃত হয়েছে।
এলজিইডি ঠিকাদার কেএম ফিরোজ রব্বানী জানান, চকলেট বা সিংগেলস্ পাথরে সিমেন্ট, বালু এমনটি বিটুমিনও ধরবে না। তাই এই পাথর ঢালাই কাজে ব্যবহৃতে বিধান নেই, কবে ব্লক তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। চলমান প্রকল্পে ভিশন, গুন বাবু ও গুড ম্যান নামের ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানেই ভরপুর অনিয়ম করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, ৮দিন ধরে প্রকল্পে ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ রয়েছে। পাউবো’র উর্দ্ধতণ কর্মকর্তারা এখনও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেনি। ইতোমধ্য ঢালাইয়ে ব্যবহৃত স্তুপ করা চকলেট বা সিংগেলস্্ পাথর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে ঠিকাদার।
বাপাউবো রংপুর পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, সাইট আপাতত বন্ধ আছে, পরিদর্শণ পুর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।