একজন ভুক্তভোগী র্যাব-১,উত্তরা, ঢাকায় এসে অভিযোগ করে যে,মোঃ তাজবিরুল ইসলাম সবুজ (৩২) নামের একজন ব্যক্তি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ০৩ বছর পূর্বে তাকে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সাজানো কাজী দিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর তাকে ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে অচেতন করে তাদের অন্তরঙ্গ মূহুর্তের দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করে। সম্প্রতি তাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় ভিকটিম তাকে ডিভোর্স দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিবাদী ক্যামেরায় ধারণকৃত এসব অশ্লীল ভিডিও বিভিন্ন ভূয়া ফেইসবুক আইডি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে। এছাড়াও ভিকটিমের নিকট হতে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলেও জানায়। প্রাপ্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাব-১ বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখ দিবাগত রাতে র্যাব-১,উত্তরা, ঢাকার একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুর মহানগরীর গাছা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভূয়া সাংবাদিক পরিচয়দানকারী প্রতারক ১) মোঃ তাজবিরুল ইসলাম সবুজ @ শেখ শিমুল (৩২),পিতা-মোঃ শেখ নুরুল ইসলাম, জেলা-বাগেরহাট’কে গ্রেফতার করে। এসময় ধৃত আসামীর নিকট হতে ২ টি ভূয়া সাংবাদিকের আইডি কার্ড,২ টি ভূয়া টিন সার্টিফিকেট,১১ টি ভূয়া প্রাতিষ্ঠানিক আইডি কার্ড, ৩ প্রকার ভিজিটিং কার্ড,১ টি স্পাই ক্যামেরা,৭ টি এটিএম কার্ড,৬ টি চেক বই,১ টি পে-অর্ডার, ১ টি বিবাহের হলফনামা,১ টি ভূয়া জীবন বৃত্তান্ত ফরম, ১ টি সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত বেল্ট, ৪ টি পেনড্রাইভ,২ টি মেমোরী কার্ড,৬ টি মোবাইল ফোন এবং ৪১ টি সীম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
ধৃত আসামী মোঃ তাজবিরুল ইসলাম সবুজ @ শেখ শিমুল’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তার জন্মস্থান বাগেরহাট জেলায় এবং সে বিগত ১০ বছর যাবৎ গাজীপুরে বসবাস করছে। ধৃত আসামী বর্তমানে গাজীপুরের সালনা এলাকায় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করে। পড়াশোনায় সে ৮ম শ্রেণির গন্ডি পার হতে না পারলেও নিজেকে একজন গ্রাজুয়েট হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দেয়। চাকুরীর পাশাপাশি সে আব্দুল্লাহপুরে‘দৈনিক আজকের আলোকিত সকাল’ নামের একটি স্থানীয় সংবাদপত্রের সংবাদকর্মী হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। সে সাংবাদিকতার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করত।
এছাড়াও বিবাদমান দুই পক্ষের সাথে সাংবাদিক পরিচয়ে সমস্যা সমাধানের মধ্যস্থতা করার জন্য টাকা দাবি করত। বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সু-সর্ম্পক রয়েছে দাবী করে আইনী সমস্যা সমাধান করে দিবে বলেও টাকা নিত। পাশাপাশি আইনী জটিলতা আছে এমন কিংবা আদালতে বিচারাধীন জমি উদ্ধারের নাম করে বিবাদমান পক্ষের কাছ থেকে টাকা আদায় করত। তার প্রতারণার কাজে ফজল,তোফাজ্জল,মাসুম,আলতাফসহ আরো ২/৩ জন তাকে সহযোগিতা করত বলে জানা যায়। ধৃত আসামী শেখ শিমুল নামে ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে এবং তার বিভিন্ন ব্যাংকে ৫ টি একাউন্ট রয়েছে মর্মে জানা যায়। এছাড়াও ভিন্ন নামে সে ২ টি টিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করে বলে জানা যায়।
মোঃ তাজবিরুল ইসলাম সবুজ @ শেখ শিমুল (৩২)’কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে,ধৃত আসামী বিগত ২০০৫ সালে তার নিজ এলাকায় ১ম বিয়ে করে। পরবর্তীতে তার ১ম স্ত্রী ১ বছর সংসার করে তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। পবরর্তীতে ২০১২ সালে ২য় বিয়ে করলে তার ২য় স্ত্রীর ১ বছর সংসার করে তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে বাগেরহাট হতে গাজীপুরে আসে এবং একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী নেয়। গামের্ন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরীর সুবাদে ২০১৪ সালে একজন গার্মেন্টস কর্মীকে বিয়ে করে। পরবর্তীতে সে ২০১৮ সালে উত্তরখান মাজার তালতলা এলাকায় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করাকালে তার ৩য় স্ত্রী বর্তমান থাকাবস্থায় নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে সেখানে কর্মরত একজন গার্মেন্টস কর্মীর সাথে প্রেমের সর্ম্পক তৈরী করে। পরবর্তীতে সে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় শারীরিক সর্ম্পক করে এবং শারীরিক সর্ম্পকের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে রাখে। ভিকটিম আসামীকে বিয়ের কথা বললে সে বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে স্থানীয় একজন মৌলভী সাহেবকে বাসায় ডেকে এনে মৌখিকভাবে ভিকটিমকে বিয়ে করে। ভিকটিম বিয়ের কাবিননামা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে সে ভিকটিমকে বিভিন্নভাবে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন শুরু করে। বিষয়টি ভিকটিম তার পরিবারকে অবহিত করে এবং তাদের পরামর্শে তার সাথে দীর্ঘ ০৩ বছর যাবৎ ঘর সংসার করে। এক পর্যায়ে ভিকটিম বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারে যে, শিমুল ইতিপূর্বে একাধিক বিয়ে করেছে। ভিকটিম পূর্বের বিয়ের বিষয়ে আসামীকে জিজ্ঞাসা করলে সে ভিকটিমকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং বিভিন্ন সময় তাদের শারীরিক সর্ম্পকের ধারণকৃত গোপন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।
একপর্যায়ে বিগত ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভিকটিম ধৃত আসামী মোঃ তাজবিরুল ইসলাম সবুজ @ শেখ শিমুল (৩২)’কে ডিভোর্স দেয়। পরবর্তীতে ধৃত আসামী ১ মাস পূর্বে গাজীপুরের সালনা এলাকায় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকরীকালীন সময়ে অপর একজন নতুন ভিকটিম একজন গার্মেন্টস কর্মীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এবং গত ২৬ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে ভূয়া নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সাজানো বিয়ে করে। তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ৪ টি পেনড্রাইভ ও ২ টি মেমোরী কার্ডে বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাওয়া যায় ।যা সে প্রতারণার কাজে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে।