ভয়াবহ সেই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি সম্প্রীতি বাংলাদেশের
আলমগীর কবীর:
ভয়াবহ সেই কালো রাত্রী ২৫ মার্চ ১৯৭১সাল ।
বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা সংগঠিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি তুলেছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। একই সঙ্গে এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি কর্মকর্তারা ।
শুক্রবার (২৫ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত '৭১ এর গণহত্যা ও পাকিস্তানের বর্বরতা' শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন দাবি তোলে সংগঠনটি।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, এ হত্যাকাণ্ড যে পূর্বপরিকল্পিত তা এখন পরিষ্কার বোঝা যায়। তারা এ জাতিকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছে। যারা এখানে হত্যাকাণ্ড করেছে তারা এ কাজে পারদর্শী ছিল। জর্ডানসহ আরও বিভিন্ন জায়গায় তারা এ কাজ করেছে। তাদেরকে পাকিস্তান সুপরিকল্পিতভাবে নিয়োগ করেছে। এটি নিঃসন্দেহে গণহত্যা, যার বহু প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি পুরোপুরি যৌক্তিক জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি আদায়ে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, হত্যাকাণ্ডের বেশ আগেই পাকিস্তান সরকার বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে এ হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতির জন্য লিখিত চিঠি দিয়েছিলো। টিক্কা খান ও রাও ফরমান এ কাজে পারদর্শী ছিল। তারা চেয়েছিল এ জাতির চরিত্র পুরোপুরি পাল্টে দিতে। একইসঙ্গে পাকিস্তানিরা তাদের প্রজন্ম এদেশে গড়ে তোলার জন্য এখানে ধর্ষণের মতো কঠিন অপরাধ করেছে। তারা ধর্ম নষ্ট করতে চেয়েছে। যারা এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তাদের ভুল বোঝানো হয়েছে।
আমরা এ বর্বরতা ভুলতে চাইনা; এ দিনকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সংগঠনের সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, ২৫ মার্চ জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখনও মেলেনি। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য দায়ী করেছে। আর্মেনিয়ার গণহত্যার স্বীকৃতি রয়েছে। আমাদেরও এ কাজ করতে হবে। পাকিস্তানকে ট্রাইব্যুনালে আনতে হবে।
শহীদ পরিবারের কৃতি সন্তান,দৈনিক প্রথমকথা প্রত্রিকার সম্পাদক,নটো কিশোর আদিত্য বলেন,পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে দেশ ও জাতিকে স্বাধীন করার জন্য যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন,জীবনকে বিসর্জন দিয়েছেন,পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দ্বারা নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন সেই সকল শহীদদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা । আমার বাবা শহীদ প্যারী মোহন আদিত্যকে ১৯৭১ সালের ৮ আগস্ট পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ঘাতকরা গুলি করে বেনোয়াটের আঘাতে মৃত্য নিশ্চিত করেন । সেই সময় বাবা ছিলেন টাঙ্গাইলের পাকুটিয়া সৎসঙ্গ আশ্রমে প্রার্থনারত ।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি আবেগালুপ্ত হয়ে আরও বলেন,যাদের হারিয়েছি তাদের তো আর কখনো ফিরে পাবো না । চাই শুধু স্বীকৃতি ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন,শহীদ পরিবারের সদস্য আরমা দত্ত, বীর প্রতিক লে. কর্নেল সাজ্জাদ আলী জহির (অব), বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক কর্নেল তৌফিকুর রহমান (অব),শহীদ প্যারী মোহন আদিত্যের সন্তান,সাংবাদিক,সমাজসেবক,ধর্মীয়নেতা ও জাতীয় পত্রিকা দৈনিক প্রথমকথা‘র সম্পাদক নটো কিশোর আদিত্য প্রমুখ।