করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। দিন যত গড়াচ্ছে ততই দুর্বল হয়ে পড়ছে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ। সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টম দিনে গণপরিবহন ছাড়া সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
গত কয়েকদিনের পুলিশের চেকপোস্টে কড়াকড়ি দেখা গেলেও বুধবার দেখা গেছে তার উল্টো চিত্র। রাজধানীর কোনো কোনো সড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপও দেখা গেছে।বুধবার (২১ এপ্রিল) সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গাবতলি, শ্যামলী, মিরপুর, আসাদগেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ধানমন্ডি, মালিবাগ, মগবাজার, কাকরাইল ও পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মোড়ে মোরে পুলিশের চেকপোস্ট নেই। কোনও কোনও মোড়ে চেকপোস্ট থাকলেও তাতে পুলিশের উপস্থিতি নেই।এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, মোটরসাইকেলে দুজন আরোহণ করছে এবং সিএনজিতে চারজন থেকে পাঁচজন পর্যন্ত চলাচল করছে। মোটরসাইকেলে দুজন চলাচল করলেও পুলিশ তাদের দেখে অনেকটা নিশ্চুপ অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলো। এমনকি মোটরসাইকেলে ডেকে ডেকে যাত্রী তুলতেও দেখা যায় অনেক রাইডারকে।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় প্রায় ৩০ মিনিট থেকে দেখা যায়, গত কয়েকদিন যেখানে পুলিশের চেকপোস্টে ছিল সেখানে আজকে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি।এছাড়াও রাজধানীর কিছু কিছু সড়কে যানজট না থাকলেও কোথাও কোথাও সিগন্যাল লক্ষ্য করা গেছে। পুরো সড়কজুড়েই রিকশা আর সিএনজির আধিপত্য চলছে। আর সড়কে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কারওয়ান বাজারের একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, লকডাউনে রাস্তায় চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও অনেকে বিনা প্রয়োজনেও রাস্তায় বের হচ্ছেন। আমরা এমন ক্ষেত্রে জরিমানা করছি। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছেন। তবে জরুরি সেবায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা অবাধে চলাচল করতে পারছেন।
জলিল নামে মিরপুরের এক বাসিন্দা বলেন, কঠোর লকডাউন হলেও রাস্তায় সবকিছুই চলছে। শুধু বাস ছাড়া। আর বাস না চলায় প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চালকরা একপ্রকার ডাকাতি শুরু করেছে। আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা কয়েক গুণ বেশি ভাড়া চাচ্ছে। আমি গুলিস্তান যাব। সিএনজি বলছে ৫০০ টাকার নিচে যাবে না। আর বাইকাররা বলছে ৪০০ টাকা লাগবে। সবই যেহেতু চলছে, তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চললে অন্তত আমাদের মতো যাত্রীদের পকেট কাটা যেতো না।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শফিকুল ইসলাম বলেন, বাসা থেকে রাস্তায় বের হলেই চারিদিকে মানুষ আর মানুষ। এতো মানুষের ভিড় যে তাতে লকডাউন মনেই হচ্ছে না। রিকশা ভাড়া দিতে দিতে গত কয়েকদিনে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। বাসটাই শুধু চলছে না। বাস চললে অন্ততপক্ষে যাতায়াতে কিছু টাকা খরচ কম হতো।
মালিবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা আবুল কালাম নামের একজন বলেন, এটার নাম লকডাউন? সড়কে দেখেন এতো গাড়ি চলছে। পুলিশের কোনো বাধা নেই। নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা না করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কষ্টে পড়ে মানুষগুলো সড়কে নামছে। তাই পুলিশ কিছুই করতে পারছে না।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার ঘোষিত ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত ৫ এপ্রিল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। নির্দেশনা অনুসারে জরুরি পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়া রাস্তাঘাটে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ারও নির্দেশনা ছিল।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিষেধাজ্ঞার দ্বিতীয় দিন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬ এপ্রিল থেকে সকাল সন্ধ্যা গণপরিবহন চলবে। তবে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। পরবর্তীতে করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের কঠোর নিষেধাজ্ঞা ১১ এপ্রিল শেষ হলেও এর মেয়াদ বাড়িয়ে ১২ ও ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। নিষেধাজ্ঞা শেষে ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ জারি করে সরকার।