সাংবাদিকতা পেশার বদনাম যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে সাংবাদিকদের সংগঠন ও সাংবাদিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয়,এটি অনেকের কাছে একটি ব্রত। বহু সাংবাদিক আছেন যারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করলে সচিব হয়ে অবসরে যেতে পারতেন। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে সাংবাদিকতা পেশায় এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ভালো ছেলেরা সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করে সাংবাদিকতাকে ভালোবেসে এ পেশায় আসেন।
শুক্রবার (২ এপ্রিল) দুপুরে কাপ্তাই উপজেলা অডিটোরিয়ামে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) আয়োজিত চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া, রাউজান ও রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই, রাজস্থলী ও কাউখালী উপজেলায় কর্মশালার সমাপনী দিনে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আমরা একটি গণতান্ত্রিক-বহুমাত্রিক সমাজে বসবাস করি, এ সমাজের দর্পণ হচ্ছে গণমাধ্যম, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সুতরাং গণমাধ্যম যখন সঠিকভাবে কাজ না করে তখন বহুমাত্রিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি বলেন, আজকের পৃথিবীটা এমন হয়ে গেছে মানুষ শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। মানুষ এখন অন্যকে নিয়ে ভাবে না। এমনকি পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়েও ভাবে না। মানুষ শুধু ছুটে চলছে, কার আগে কে যাবে। কাকে টপকিয়ে, ল্যাং মেরে উপরে যাবে সেটা নিয়েই ছুটে চলে। এটি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা।সাংবাদিকদের উদ্দেশে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকদের রাষ্ট্রের ও সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি আমরা যাতে উন্নত সমাজ গঠন করতে পারি, সেটির ব্যাপারেও লিখতে হবে। একই সঙ্গে যে কথা বলতে পারে না, যার ভাষা হারিয়ে গেছে তার জন্যও লিখতে হবে।তথ্যমন্ত্রী বলেন,দু-একজন সাংবাদিকের অনৈতিক কাজের জন্য পুরো সাংবাদিক সমাজকে দায়ী করা যাবে না। সাংবাদিকরা হচ্ছে সমাজের দর্পণ। কিছু ব্যক্তির কারণে সাংবাদিকদের যাতে বদনাম না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারন একজন সাংবাদিক যা করতে পারে তা অন্য কেউ তা পারেনা।
পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে ও রাঙ্গুনিয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিগারুল ইসলাম জিগারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান,পুলিশ সুপার মীর মোদাচ্ছের হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মামুন, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশন আরা রব, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র মো. শাহজাহান সিকদার,কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল, চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান ও কুষ্ঠ হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং প্রমুখ।পরে সাংবাদিকতায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহনকারীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। উল্লেখ্য, প্রশিক্ষণে কাপ্তাই, রাঙ্গুনিয়া, কাউখালি, রাজস্থলী এবং রাউজান উপজেলার ৩৫ জন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে তথ্যমন্ত্রী তার নির্বাচনি এলাকা রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অপর এক অনুষ্ঠানে বলেন, ধর্মকে ব্যবহার করে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা কখনও সফল হবে না। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে,ধর্মের নামে বিএনপি-জামায়াতসহ একটি মহল গন্ডগোল লাগিয়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দেশবাসীকে এদের বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
ইসলামের নামে নৈরাজ্য করে মানুষের ঘরবাড়ি ও গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তারা হাটহাজারী ভূমি অফিসে অগ্নি হামলা চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়িয়ে দিয়েছে, ফায়ার সার্ভিসে হামলা করে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, এই বিষয়গুলো কখনও ইসলাম সমর্থন করে না।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে, যারা স্বাধীনতাবিরোধী, সেই বিএনপি-জামায়াতচক্র এখনও দেশের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আর, তাদের সহযোগিতায় সুযোগ সন্ধানের অপেক্ষায় থাকা একটি মহল ইসলামের নামে গন্ডগোল সৃষ্টি করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। আর, তারা যে এসব করে সরকারের উন্নয়নের ধারাকে থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত, দেশের সাধারণ জনগণ তা বোঝে এবং জনগণই এসব নৈরাজ্য প্রতিহত করবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সুতরাং ধর্মকে ব্যবহার করে যারা ব্যক্তিগত ও দলের স্বার্থ হাসিল করতে চায়, তাদের এসব অপচেষ্টা কখনোই সফল হবে না।