সাম্প্রতিক প্রকাশিত এমন একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, তিন বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা ৩২ হাজারের বেশি ই-সিগারেট ব্যবহারকারী ও ধূমপায়ীদের মধ্যে গবেষণায় এ তথ্য পেয়েছেন। যারা ই-সিগারেট ব্যবহার করে অথবা ই-সিগারেটের ধোঁয়া টানে তাদের ই-সিগারেটের পাইপে তামাক জাতীয় বস্তু না থাকলেও এদের অনেকেই রেসপিরেটরি (শাসযন্ত্র) রোগে ভোগে। সানফ্রান্সিস্কোর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার প্রফেসর স্ট্যান্টন গ্ল্যান্টজ বলেন, ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর ফুসফুস তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার পরও বিসদৃশভাবে রোগে আক্রান্ত হয়। গবেষণার পর আমরা এই উপসংহারে পৌঁছেছি যে, ই-সিগারেট ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর এবং প্রচলিত সিগারেট পান করার প্রভাবের চেয়ে এটা স্বতন্ত্র। ই-সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।উল্লেখ্য, বেশ কয়েক বছর থেকে বাংলাদেশে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। একটা সময় রাজধানীর অভিজাত এলাকার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন নি¤œ মধ্যবিত্ত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এর ব্যবহার বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ হলো ডিস সংস্কৃতির কল্যাণে তারা বিদেশী মুভি অথবা টিভিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখছে যেখানে ই-সিগারেট টানার দৃশ্য দেখা যায়। এ ছাড়া অুিভজাত কলেজ অথবা সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের থেকে শিখছে। সর্বোপরি এটা এখন সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে। চীনা তৈরি পাইপ এখন বেশ সহজলভ্য। ফুটপাথে অথবা টং দোকানেও ই-সিগারেটের যন্ত্র ও এর রাসায়নিক পদার্থটি পাওয়া যায়।
গবেষকরা তিন ধরনের লোকদের ওপর এ বিষয়ক গবেষণা করেন। এদের একদল কখনোই ই-সিগারেট ব্যবহার করত না, একদল ই-সিগারেট ব্যবহার করত এবং অন্য আরেকটি দল এখনো ই-সিগারেট ব্যবহার করছে।
গবেষণা দেখা গেছে, আগে ই-সিগারেট ব্যবহার করেছে এমন লোকদের ৩১ শতাংশের অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যামফিসিম অথবা ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজে (সিওপিডি) আক্রান্ত হয়েছে। এমনকি এদের তামাকের ব্যবহার, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগও এর মধ্যে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। প্রফেসর স্ট্যান্টন বলেন, ই-সিগারেটের ধোয়া টেনেছে এমন ২৯ শতাংশের রয়েছে ফুসফুসের অদ্ভুত ধরনের রোগ।গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান করে না এমন লোকদের চেয়ে তামাক থেকে তৈরি সিগারেট পান করে এমন লোকেরা ২.৫ শতাংশ বেশি ফুসফুস রোগে ভোগেছে কিন্তু গবেষণায় অংশগ্রহণকারী লোকদের মধ্যে যারা ই-সিগারেট ও তামাক থেকে তৈরি সিগারেট উভয়টিই পান করেছে এদের মধ্যে ফুসফুসের রোগগুলো সবচেয়ে বেশি। আমেরিকান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিনে প্রকাশিত এ গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, এ ধরনের সিগারেট পানে অভ্যস্ত লোকেরা উপরের চারটি রোগে ৩.৩ গুণ বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ৫২ জন ই-সিগারেট ব্যবহারকারী মারা গেছে ফুসফুসে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হওয়ায় এবং এ কারণে দুই হাজার ৪০০ জন চিকিৎসা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতালে।
প্রাণীর ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, ই-সিগারেট পানে ফুসফুসের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্বাসকষ্ট ঘটায়। ব্রিটেনের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির গবেষণায় গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, শ্বাস-প্রশ্বাসের রাস্তায় ই-সিগারেটের রাসায়নিকগুলো জ্বালা-যন্ত্রণা ঘটায় এবং একসময় ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যামফিসিম তৈরি করে। ২০১৬ সালে এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা ই-সিগারেটের মাধ্যমে ধোঁয়া টেনেছে তাদের ৭১ শতাংশ বেশি ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হয়েছে তাদের তুলনায় যারা ইলেকট্রনিক এ সিগারেটের ধোঁয়া টানেনি। তবু অনেক ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন যারা তামাকের তৈরি সিগারেটের অভ্যাস ছেড়ে দিতে চায় তাদের জন্য ই-সিগারেট তুলনামূলক নিরাপদ।