অর্থকষ্টে শ্যামপুর সুগারমিলের শতাধিক শ্রমিক
রংপুর থেক, শাহ্ রায়হান বারী:
রংপুরের ভারী শিল্প শ্যামপুর সুগারমিলের ৫শ কোটি টাকা লোকসানের দায়ে অর্থকষ্টে অমানবিক জীবনযাপন করছেন শতাধিক শ্রমিক কর্মচারী। ৯ মাস থেকে বেতন না পেয়ে পরিবারগুলোর বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। ছেলে মেয়েদের শিক্ষা জীবন অকালে ঝরে পরার উপক্রম। প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি পাল্টে দিতে পারে এই অবস্থা বলছেন মিলটির শ্রমিক কর্মচারীরা ।
১শ ১১ একর ৪৫ শতক জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এই সুগারমিল ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৬৭ সালে জাপানী কোম্পানি মিতসুবিশি মিলটি পরিচালনার দায়িত্ব পায়। বছরে ১০ হাজার মেট্রিকটন উৎপাদনকারী এই লাভজনক প্রতিষ্ঠান ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ হলেও প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন লাভের ঘরে ছিল। ১৯৯৯-২০০০ অর্থ বছর থেকে লোকসান দিয়ে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়দের অনেকের মতে সঠিক ব্যবস্থাপনা, আয়বর্ধক যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত ও আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করনে বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহন ও বাস্তবায়নের অভাবে মিলটি লোকসানমুখী হয়েছে। গত ২০ বছরে ৫শ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে এই সুগারমিল। বন্ধ ঘোষণার আগে ২০১৯-২০ অর্থ বছরেও ৬১ কোটি টাকা লোকসান দেয় মিলটি। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন লোকসান থেকে উত্তোরনের উপায় খুঁজে বের না করে ২০২০-২১ অর্থ বছরের নভেম্বর মাসে মাড়াই সহ সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ৪শ ৯৩ জন জনবলের মধ্যে ৩শ ৮৯ জনকে অন্যত্র পদায়ন করলেও শ্রম আইনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। ৯ মাস থেকে বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে অবশিষ্ট ১শ ৪ জন শ্রমিক কর্মচারীর। মিলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ আহসান হাবিব বলেছেন এটিকে কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করতে ইতোমধ্যে প্রস্তাবপত্র কর্পোরেশনে পাঠানো হয়েছে। দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতির এই কঠিন সময়ে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। বেতন ভাতা পাবার আশা নিয়ে স্থানীয় দোকান গুলোতে বাকির খাতা বড় হয়ে পরিশোধ করতে না পারায় লাঞ্চনার শিকার হচ্ছেন অনেকেই। ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজের বেতন দেয়া, বই কেনা থেকে শুরু করে শিক্ষার ব্যয়ভার বহনে ব্যর্থ হয়ে লেখাপড়া ছেড়ে দেয়ার উপক্রম হয়েছে অনেকের । মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি সহ পরিবহন কাজের ট্রাক ও ট্রাক্টর চেয়ার টেবিল এখন নষ্টের দিকে। রংপুরের এই ভারি শিল্প স্থায়ীভাবে বন্ধ না করে সঠিক ব্যবস্থাপনা, আয়বর্ধক যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত ও আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করনে বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহন ও বাস্তবায়ন মিলটিকে প্রতি বছর লাভের মুখ দেখাতে পারে। এমনটি মনে করছেন রংপুরের ব্যবসায়ী সমাজ সহ সচেতন মহল। রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রেসিডেন্ট মোঃ মিলন লোকসান কাটিয়ে লাভে আনতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিকল্প কিছু নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রেসিডেন্ট মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, রংপুরে এই ভারি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে দক্ষ জনবল ও সরকারের যুগোপযোগী পলিসি গ্রহনের উপর জোর দিয়ে তা দ্রত বাস্তবায়নের কথা বলেছেন।